মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নির্বাচনে জোটের চ্যালেঞ্জ ভোটে

একাদশকে টার্গেট করেই বহুমুখী ভাবনায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

একাদশকে টার্গেট করেই বহুমুখী ভাবনায় বিএনপি

বর্জনকে ‘না’ জানিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জোটের প্রধান দল বিএনপি দল গোছানো, সহায়ক সরকার দাবির আন্দোলনসহ বৈশ্বিক কূটনীতি ছাড়াও বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে। দলের প্রধানসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় ‘সাজা’ ঝুঁকিসহ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরই মধ্যে বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব ভোটের মাঠে নেমে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনের এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। পোস্টার-ব্যানারসহ নানা প্রচারপত্র শোভা পাচ্ছে সমানতালে। একইভাবে জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীও আজ অস্তিত্ব সংকটে। অন্য দলগুলোর তত্পরতা নেই বললেই চলে। জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভোটে কাবু করতে নানা ধরনের ছকও তৈরি করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে লন্ডনে বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তিন মাসেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন বেগম জিয়া। সেখানে দলের ভবিষ্যৎ ছাড়াও আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে মা-ছেলে কথা বলেছেন। বেগম জিয়াকে মামলার জালে আটকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়েও কথা হয় দলের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে। এ ছাড়া ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন, আন্দোলন করতে হলে দলের নেতৃত্ব কাঠামো কী হতে পারে— তা নিয়েও মা-ছেলের মধ্যে কথা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে। জানা যায়, গত রবিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বেগম জিয়ার বৈঠকের মুখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচন। অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ নির্বাচনে যাওয়ার বাধাগুলোও তুলে ধরেছে বিএনপি। দলটি জানায়, ভারতও বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। তবে তারা এটাও চায়, বিএনপি যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এদিকে লন্ডনে থাকা অবস্থায়ও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বিএনপিপ্রধান। সেখানেও মূল এজেন্ডা ছিল আগামী নির্বাচন। কূটনীতিকরাও বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে চান। সেক্ষেত্রে তারাও কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন বলে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। বিএনপির সেই প্রস্তুতিও আছে। সেক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এটা তৈরি করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সরকারের আচরণে তা মনে হচ্ছে না। তারা বিএনপিকে বাইরে রেখেই নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এটা আর সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’ সূত্রমতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন সুবিধা মতো সময়ে বিএনপিপ্রধান জাতির সামনে এ রূপরেখা ঘোষণা করবেন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপও করেছে। সেখানে বিএনপি ২০ দফা দাবি তুলে ধরেছে। এগুলো নির্বাচন কমিশন আমলে নেবে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছে। গতকাল দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে লন্ডন সফরসহ চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের খসড়া প্রস্তাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এ জন্য বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে তত্পরতা চালানো হচ্ছে। ‘যেনতেন ভাবে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে ‘সাজা’ দিয়ে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। কিন্তু মামলা-হামলায় দল দুর্বল হয়ে যায়নি, অতীতের চেয়ে বিএনপি আরও শক্তিশালী বলেই মনে করছেন নেতারা। তাই সামনে যত বাধাই আসুক, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে মনে করেন সিনিয়র একাধিক নেতা। এ প্রসঙ্গে সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নিত্যনতুন মামলা দিয়ে, গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোভাব-মনোবলকে আপনারা ভাবছেন দুর্বল করবেন, আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বেগম জিয়া শত অত্যাচারকে মাথায় নিয়ে জনগণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও জনগণের নেতৃত্ব দেবেন।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক সদস্য জানান, নিজ দলের পাশাপাশি জোটের শরিকদেরও শক্তি অর্জনে নির্দেশনা দিয়েছেন জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। ভোটের জন্য শরিক দলগুলোকেও প্রস্তুত থাকার কথা জানানো হয়েছে। শরিক দলদের বলা হয়েছে, সবাইকে নিয়েই নির্বাচনে যাবেন বেগম জিয়া। এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে। একইভাবে জোট ছাড়াও অন্য কেউ বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি তাতেও ছাড় দেবে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫০টিতেই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জেলায় আংশিক কমিটি এবং দুটি আহ্বায়ক কমিটি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বাইরে থাকায় পুনর্গঠন কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এখন আবার অবশিষ্ট জেলা কমিটি দেওয়া হবে। এরই মধ্যে অন্তত ১৫টি জেলা কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে বিএনপি দল গোছানোর কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিএনপির প্রায় সব অঙ্গ-সংগঠনের নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটিও খুব শিগগিরই দেওয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে দল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন ও আন্দোলন—সামনে রেখেই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে জেলা কমিটি পুনর্গঠন অনেক দূর এগিয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত সম্পন্ন হবে। অসম্পূর্ণ অঙ্গ-সংগঠনগুলোও শিগগিরই দেওয়া হবে। এ জন্য খুব একটা সময় লাগবে না। বিএনপি চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। তার জন্য বিএনপি সব সময়ই প্রস্তুত।’

সর্বশেষ খবর