বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়ে উল্টো কারাদণ্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জমির ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়ে উল্টো কারাদণ্ড পেলেন মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম শাহজাহান। ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানকে মঙ্গলবার এক মাসের কারাদণ্ড দেন। রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) শাহজাহানের জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে তাকে ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণ করতে বলা হয়। গত ২ মার্চ তিনি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এলএ) কাছে জমির ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য আবেদনও করেন। মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক হিসেবে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যান। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করার অভিযোগে ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে উল্টো তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাহজাহানের আইনজীবী শাহ এমরান আজাদ বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণজনিত ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা আ ন ম শাহজাহান মঙ্গলবার বিকালে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেয়।

পরিবারের অভিযোগ শাহজাহানকে অন্যায়ভাবে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ চাইতে গেলে তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন বিচারপ্রার্থী আদালতে বিচার চাওয়ার অধিকার রাখে। অথচ যাচাই-বাছাই না করে এই ধরনের দণ্ড দেওয়া দৃষ্টিকটু। এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া অনেক দণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

২ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এলএ) কাছে করা আবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের ৭(৩) ধারা অনুসারে আমার বরাবর চূড়ান্ত নোটিস ইস্যু করার কারণে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আমার মালিকানাধীন জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক হিসেবে আমার নামে এওয়ার্ড লিস্ট করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমাকে চার কোটি ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৬ টাকার চেক ইস্যু করে। আমার মালিকানাধীন আরও সম্পত্তি অধিগ্রহণ হওয়ায় আমি গত ৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আমাকে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমাকে দেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক (রাজস্ব) মো. আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে, সিএস ৫৬৫ নং দাগের ৮৪.০৯ একর জমির মালিক কুমার রবিন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পক্ষে ভাওয়াল রাজ স্টেট কোর্ট অব ওয়ার্ডস। উক্ত দাগ থেকে উদ্ভূত আরএস ১০৫৮, ১৬৩৯, ১৬৪৪ নম্বর দাগের ১.৭০৯৬ একর সম্পত্তি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা ব্যক্তির অনুকূলে পরিশোধ করা হয়েছে। সেই টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। এলএল শাখা-২ থেকে এই তথ্য জানার পর জেলা প্রশাসককে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক আবেদনে আমি জানাই যে, ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক (রাজস্ব) আনিসুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠির অডিট রিপোর্ট যথাযথ নয় ও আইনের চোখে অচল। কারণ ১৯৫০ সালের জমিদারি উচ্ছেদের প্রজা স্বত্ব আইন অনুযায়ী প্রজারা সরকারের অধীনে এসএ, আরএস ও সিটি জরিপ খতিয়ান অনুযায়ী সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেছে। ওই আবেদনে আরও বলা হয়, ভাওয়াল রাজ স্টেট অবৈধভাবে কিছু সম্পত্তি আরএস ৫০০ নম্বর খতিয়ানে ম্যানেজার, ভাওয়াল রাজ কোর্ট অব ওয়ার্ডস স্টেটের নামে ১৯৯৮ সালে রেকর্ড হয়। এই রেকর্ড সঠিক নয় দাবি করে দেওয়ানি মোকদ্দমা করা হলে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ম্যানেজার, ভাওয়াল রাজ কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর উক্ত আরএস ৫০০ নম্বর খতিয়ানের জমি ভুল ঘোষণা করে আদালত। একই সঙ্গে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর এ বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজার, ভাওয়াল রাজ কোর্ট অব ওয়ার্ডস স্টেট ও ভূমি সংস্কার বোর্ড উচ্চ আদালতে গেলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। তাই আরএস ১০৫৮, ১৬৩৯ ও ১৬৪৪ নম্বর দাগের সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি বলার অবকাশ নেই।

সর্বশেষ খবর