বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নেপিদোতে হবে ১০ দফার চুক্তি

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাক্ষর করবেন ২৩ নভেম্বর

জুলকার নাইন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আগামী ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। সেদিন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত এই চুক্তির খসড়ায় ১০ দফা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে রাজি নয় মিয়ানমার। অমীমাংসিত এসব বিষয় নিয়ে নেপিদোতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা করতে পারে দুই দেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে বৈঠকের পরপরই স্বাক্ষর হবে চুক্তি বা এমওইউ এবং এটি বাস্তবায়নে গঠন করা হবে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি। তবে এই চুক্তিতে ব্যবহার হবে না ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি। পরিবর্তে ‘মিয়ানমারে দীর্ঘদিন বসবাসের পর বাস্তুচ্যুত’ কথা ব্যবহার করা হতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ১৯৯২-এর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি ও ২০০০ সালের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতাগুলোকে মাথায়  রেখেই নতুন চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো লিডার অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রীর সফরের সময় তার কাছে প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। চলতি মাসের শুরুতে চুক্তির খসড়ায় নিজেদের সংশোধনী পাঠায় মিয়ানমার। পরে বাংলাদেশও এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত দেয়। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের শনাক্তে কয়েকটি প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়ে নীতিগত অবস্থান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ফিরতে হলে রোহিঙ্গাদের  কোনো না কোনো প্রমাণ দেখাতে হবে। প্রত্যাবর্তনে আগ্রহীদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে থাকতে হবে মিয়ানমারে। বাংলাদেশও মনে করছে, আইনগতভাবে মিয়ানমার তার নাগরিক শনাক্তে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের অধিকার রাখে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র সংরক্ষণ কতটা সম্ভব হয়েছে তা সংশয় থাকায়, তৃতীয় একটি পক্ষকে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের যে কোনো সংস্থা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এ কাজে সহায়তা করতে পারে। রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্যও মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকার কর্মকর্তারা। কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে যদি তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা না পায় তাহলে ভবিষ্যতে বর্তমান পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হলে আবারও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। জানা যায়, প্রস্তাবিত চুক্তিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে চারটি কড়া শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্ত চারটি হচ্ছে— যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন বসবাসের প্রমাণপত্র দাখিল করতে পারবে, স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরতে চাইবে, পরিবারের কেউ মিয়ানমারে রয়েছে  তেমন প্রমাণ দেখাতে পারবে এবং বাংলাদেশে জন্মানো শিশুগুলোর বাবা-মা উভয়েই মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণিত হলে তবেই তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এসব শর্তের বিষয়ে সম্প্রতি ভারতের এক নীতি গবেষণাবিষয়ক সেমিনারে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি ইউ কিয়াও জিয়া বলেছেন, ‘স্কুলে পড়া, হাসপাতালে চিকিৎসা, চাকরির নথি- এসবের মতো কিছু একটা প্রমাণ দেখাতেই হবে। না হলে ফেরত নেওয়াটা মুশকিল। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সময় সাপেক্ষ বলেও মন্তব্য করেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা। অন্যদিকে ডি ফ্যাক্টো লিডার অং সান সু চি আসিয়ান নেতাদের বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হবে। এর আগে গত শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সিপিডির এক সংলাপে জানিয়েছেন, দুই দেশ চুক্তির স্বাক্ষরের কাছাকাছি চলে এসেছে। উভয় দেশ চুক্তির খসড়ার বিষয়ে প্রায় সম্মত। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ইঙ্গিতও দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০ নভেম্বর মিয়ানমার সফর শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০-২১ নভেম্বর এশিয়া-ইউরোপ মিটিং-এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২২ ও ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর উভয় দেশ রাজি থাকলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর