বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচারপতি জয়নুলকে নিয়ে চিঠি সুপ্রিম কোর্টের নয় : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদককে নিরুৎসাহিত করতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি নিয়ে রুল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুলের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না—মর্মে সুপ্রিম কোর্টের এমন চিঠির মতামত সুপ্রিম কোর্টের নয় বলে রায়ে উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায়ে বলা হয়েছে, এটা আপিল বিভাগের প্রশাসনিক চিঠি। সুপ্রিম কোর্টের মতামত নয়। আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণগুলো হলো—(১) আপিল বিভাগের প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে দেওয়া ওই চিঠি দেওয়া যথাযথ হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে জারি করা রুলের বিচার চলতে পারে। (২) এ চিঠি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ও নিজ এখতিয়ার বহির্ভূত যুক্তি গ্রহণ করেছে, যা কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। (৩) এ চিঠি আপিল বিভাগ নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতায় দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের মতামত হিসেবে বলার কোনো সুযোগ নেই। (৪) এ চিঠি জনগণের কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। (৫) ওই চিঠি জনগণের কাছে এ বার্তা দিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে দায়মুক্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না। তবে রাষ্ট্রপতি শুধু তার পদে বহাল থাকাবস্থায় এ দায়মুক্তি পাবেন। (৬) সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে সাত বছর ধরে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা কোনোভাবেই যুক্তিপূর্ণ নয়। (৭) ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অকারণে তাদের মর্যাদাহানি না ঘটে বা তারা হয়রানির শিকার না হন। কারণ এর সঙ্গে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও গৌরব জড়িত রয়েছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি পর্যবেক্ষণসহ রুল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মূল কথা হলো—এ চিঠিটাকে কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। এটি আপিল বিভাগের একটি অফিশিয়াল চিঠি। এ চিঠি দিয়ে জনমনে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। মনে হবে জজরা আইনের ঊর্ধ্বে। একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে দুদক তা অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে। আদালত বলেছে, (বিচারপতি জয়নুলের ব্যাপারে) দুদক সাত বছর ধরে অনুসন্ধান করছে, একটা অনুসন্ধান করতে সাত বছর প্রয়োজন হবে কেন? দুদকের আইনজীবী বলেন, রায়ে এটা বুঝলাম যে, চিঠিটা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি হতে পারে। এ চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি। এটাকে কোনো ক্রমেই সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। আমরা বলতে পারি ওই চিঠি অবৈধ। জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন হাই কোর্টের রায়কে পজিটিভ হিসেবে মন্তব্য করেন।

এর আগে ৩১ অক্টোবর হাই কোর্টের এই বেঞ্চ বিষয়টি শুনানি শেষে রায় অপেক্ষমাণ রাখে। ৯ অক্টোবর হাই কোর্ট রুল জারির পর ১৯ অক্টোবর রুলের শুনানি শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত দুদকে ২৮ মার্চে পাঠানো ওই চিঠিটি নজরে আনা হলে সুয়োমটো রুল জারি করে আদালত। একই সঙ্গে রুল শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক এ এম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী প্রবীর নিয়োগীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি জয়নুলের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে অংশ নেন।

জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে হাই কোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগের পর ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক তাকে নোটিস দেয়। ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাই কোর্টে রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাই কোর্টে বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে। ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ চিঠি দেয় দুদক। এরপর ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে।

সর্বশেষ খবর