বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৬১০ ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৬১০ ডলার

আ হ ম মুস্তফা কামাল

প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির একটি প্রাথমিক প্রাক্কলন করে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। চূড়ান্ত হিসাব পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই সাময়িক হিসাবটি ব্যবহার করে থাকে সরকার। সাধারণত সাময়িক হিসাবে যা দেখানো হয়, চূড়ান্ত হিসাবে তার চেয়ে কিছুটা কমে যায় জিডিপি। এত দিন তাই হয়ে আসছে। এবার ঘটেছে ব্যতিক্রমী ঘটনা। গত অর্থবছরের জিডিপি নিয়ে সরকার যে সাময়িক হিসাব         দিয়েছিল, তার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের প্রত্যাশাও ছাড়িয়ে গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। মাথাপিছু আয়ও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির (সাময়িক) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।’ প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বসিত পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের নতুন ইতিহাস। বৃত্ত ভেঙে রেকর্ড পরিমাণে জিডিপি অর্জিত হলো।’ তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে কম সময়ে মাত্র তিনটি দেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে অর্জন করল। বাংলাদেশ বাদে বাকি দেশ দুটি হচ্ছে কম্বোডিয়া ও ইথিওপিয়া। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশবাসীর মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা। গত অর্থবছরে দেশবাসীর মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন ছিল ১ হাজার ৬০২ ডলার। চূড়ান্ত হিসাবে ৮ ডলার বেড়েছে এটি। মুস্তফা কামাল বলেন, দেশ স্বাধীনের ৩৪ বছরে জিডিপির আকার ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত কয়েক বছরে এটি বেড়ে হয়েছে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূলত জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। তিনি জানান, জিডিপির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতে ২ দশমিক ৯৭, শিল্প খাতে ১০ দশমিক ২২ ও সেবা খাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন’ প্রকল্প। প্রায় ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যে পায়রা নদীসংলগ্ন এলাকায় লেবুখালীতে এটি হবে দেশের ৩১তম সেনানিবাস। প্রায় দেড় হাজার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া সেনানিবাসটির নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সেনানিবাস স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাসের সহায়তা নিতে হয়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সরকারের বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি সেসব প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশালে একটি সেনানিবাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার ঘোষিত ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানের সেনাবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

একনেকের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে : মোংলা বন্দর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং প্রকল্প, শালিখা (মাগুরা)-আড়পাড়া-কারিগঞ্জ (ঝিনাইদহ) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প, বরিশাল (দিনারের পুল)-লক্ষ্মীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙামাটি নদীর ওপর গোমা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, ভেড়ামারা (বাংলাদেশ)-বহরমপুরের (ভারত) দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ প্রকল্প, জাতীয় চিত্রশালা এবং জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের সম্প্রসারণ ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প, ঝিনাইদহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প ও ইনস্টিটিউট অব বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সেস প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর