বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুরের সেই টিটু গ্রেফতার

ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

যার বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় অভিযুক্তসহ হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় সেই টিটু রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল দুপুরে ঠাকুরপাড়া পরিদর্শন শেষে সেখানে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিটু রায়ের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সোমবার রাত ৪টায় নীলফামারীর জলঢাকা  উপজেলার গোল্লা ইউনিয়নের চিড়াভেজা গোল্লা গ্রামে টিটুর স্ত্রীর এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। টিটু রায় দশ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বসবাস করলেও ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর গ্রেফতার এড়াতে রবিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জলঢাকার চিড়াভেজা গোল্লা গ্রামে আসেন। ওই গ্রামে বিয়ে করেন টিটু। তিনি ঠাকুরপাড়ার প্রয়াত খগেন রায়ের ছেলে। শুক্রবার হামলাকারীরা টিটু রায়ের ঠাকুরপাড়ার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এদিকে ঠাকুরপাড়ায় হামলার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে পুলিশ যে চারজনকে শনাক্ত করেছে তাদের তিনজনকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। এরা হলেন, বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইনামুল হক মাজেদী, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য মাসুদ রানা, খলেয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সদস্য মোস্তাইন বিল্লাহ। তবে শনাক্ত ইন্ধনদাতা খলেয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও শলেয়াশাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিরাজুল ইসলামকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আরও ১২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী বলে দাবি করছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল দুপুরে ঠাকুরপাড়া পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। হামলার বর্ণনা শোনেন। পরে তিনি স্থানীয় হরকলি বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে জেলা পুলিশ প্রশাসন আয়োজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  তদন্তে টিটু রায় যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর দোষী প্রমাণিত না হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে ফেসবুকে তার নাম ব্যবহার করে যারা ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস দিয়ে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। তিনি হামলার ঘটনায় ইন্ধনদাতাসহ প্রকৃত হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। এক বছর পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি মহল। এরা দেশের উন্নয়ন চায় না, এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এই শক্তিকে ইন্ধন দিচ্ছে বিএনপি। যার প্রমাণ মিলেছে ঠাকুরপাড়ায় হামলার ঘটনায়। বিএনপি, ওলামা দল ও জামায়াত-শিবির মিলে এ হামলা চালিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে। তিনি এই মহলটির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশী, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর