বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণের দায় নিতে হবে এমডিদেরও

অর্থমন্ত্রীর অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে এবং নিজের কার্যকালে দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে তার দায় নিতে হবে নিজ নিজ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি)। কেননা বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়েও এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর তুলনায়। ফলে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ নির্বাহীদের দক্ষতা, আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে অর্থবিভাগ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য এ ধরনের একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রকৃত খেলাপি ঋণ হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৪৫ হাজার কোটি টাকা অবলোপন (রাইট অফ) করা; যা পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশের বেশি। যা উদ্বেগজনক বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এটাকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানও।  সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে আছে। জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ শতাংশ আটকে আছে ২০ জনের কাছে। রূপালী ব্যাংকের ৫১ শতাংশ আটকে আছে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে। আর সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব ঋণ আদায়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে গত ২৬ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিতে হবে এমডিদের। এমনকি নিজেদের কার্যকালে দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে তার দায়ও নিতে হবে। কেননা একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা যে ঋণ দেন তা তো খেলাপি হয় না। শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই খেলাপি বাড়ছে। এ জন্য শীর্ষ নির্বাহীদের পুরস্কারের পাশাপাশি তিরস্কারের ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে কর্মশালায় মত দেওয়া হয়। ওই কর্মশালার মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একাধিক বৈঠক করেছে এবং এ ধরনের একটি সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হওয়া গ্রাহকদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ব্যাংকারই উদ্যোক্তাদের খেলাপিদের জালে আটকে ফেলেন নিজেদের পকেট ভরাতে। এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এমডিদের অবশ্যই আরও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর