বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যাবে না : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব! আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটিতে এখন অনেক গভীরে, ধাক্কা দিয়ে এই বটবৃক্ষের পতন হবে না। ধাক্কা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেলা যাবে না; আওয়ামী লীগ বিএনপি নয়। গণমানুষের নেতা ঢাকার তৎকালীন মেয়র হানিফের জনতার মঞ্চের এক ধাক্কায় আপনাদের সরকারের পতন হয়েছিল, নিশ্চয় মনে আছে আপনাদের।’ গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

 ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ওসমান গনি, যুবলীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।

হানিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহভাজন, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের স্মরণসভায় গতকাল নেমেছিল মানুষের ঢল। এর আগে সকালে আজিমপুর কবরস্থানে মেয়র হানিফের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মেয়র সাঈদ খোকনসহ মহানগরী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা এবং সর্বস্তরের মানুষ। মেয়র আসার আগেই নগর ভবন মিলনায়তনে আসতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যায়নি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও। আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এবং যুবলীগ দক্ষিণের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে মিছিলসহকারে যোগ দেন নগর ভবনের স্মরণসভায়। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলররাও মিছিল নিয়ে আসেন স্মরণসভায়। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও যুবলীগ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মিছিলসহকারে প্রবেশ করেন স্মরণসভায়। এ ছাড়া দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যানারসহকারে মিছিল নিয়ে স্মরণসভায় যোগ দেন। নগর ভবনের সামনে স্থাপিত স্মরণসভা মঞ্চের সামনে মানুষের ঢল নামে। তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না। নগর ভবনের সামনের রাস্তা পর্যন্ত মানুষের পদভারে ছিল মুখরিত। নগর ভবন ছাপিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাদের স্মৃতিচারণামূলক বক্তৃতা শোনেন নেতা-কর্মীরা।

‘মিলে গেছে খোকন-মুরাদ’ : স্মরণসভায় বক্তব্য চলাকালে মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই নেতা শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে মঞ্চে ডেকে এনে তারা ‘মিলে গেছে’ বলে জানান ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার মাঝখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শাহে আলম কই, মেয়র সাহেব কই, এদিকে আসো সাঈদ খোকন... মুরাদ।’ তারা মঞ্চের সামনে আসার পর সবাইকে দেখিয়ে কাদের বলেন, ‘এই দেখুন, তারা মিলে গেছে।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘এই দেখুন এক হয়ে গেছে, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি ছিল, এক হয়ে গেছে। মহানগরী আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ, আজকে আমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য নেতা মেয়র হানিফকে স্মরণ করতে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে সবার সামনে তুলে ধরব; সেই শপথই আপনাদের সামনে দিলাম।’ তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে বসে নিরসন করবেন। না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অথবা আমাকে জানাবেন। আমি না পারলে নেত্রীকে জানাবেন। তবুও নিজেদের শত্রু নিজেরা হবেন না। চায়ের দোকানে বা বাসে চড়ে একে অন্যের সমালোচনা করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। আমরা নিজেরা যদি নিজেদের শত্রু হই, তাহলে বাইরের শত্রুর দরকার নেই।’

মেয়র হানিফ মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতেন : মেয়র হানিফের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কর্মীদের কীভাবে সংগঠিত করতে হয় তা শিখিয়েছেন মেয়র হানিফ। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে মানবঢাল তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বাঁচিয়েছেন। এমন নেতার আজ বড় অভাব। এ রকম কর্মী আমাদের আরও চাই। তিনি রাজনীতি করতেন ব্যবসা করার জন্য নয়। রাজনীতি করতেন মানুষের কল্যাণে। তিনি ছিলেন বিনয়ী। আমি বয়সে ছোট হলেও কখনো নাম ধরে ডাকতেন না। কাদের ভাই বলে সম্বোধন করতেন। আজকে তার মতো নেতার বড় প্রয়োজন। যারা হানিফের মতো কমিটমেন্ট রাখবেন, তারাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবেন।’

সভাপতির বক্তব্যে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমার বাবা আমৃত্যু মানুষের কথা চিন্তা করেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। আমি বাবার পাশে থেকে দেখেছি কীভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। একজন রাজনীতিবিদের বড় গুণ কর্মীদের কাছে টেনে নেওয়া। আমার বাবা ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশ ও দলের প্রতি আনুগত্য থেকে কাজ করে গেছেন। সারা জীবন মানুষের পাশে থেকেছেন। ঢাকায় এমন কোনো উন্নয়ন নেই যা বাবার হাত দিয়ে হয়নি। কোনো মানুষ বাবার কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যাননি।’ এ সময় তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কতটা বিচক্ষণ হলে অতি অল্প বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী হওয়া যায় চিন্তা করুন। এ রকম ত্যাগী নেতার আমাদের বড়ই অভাব।’

ডিএসসিসির বিলবোর্ড সংশোধন, দুজনকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ : অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় টানানো ছোট ছোট এলইডি বিলবোর্ডের লেখায় সংশোধন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, এটা ষড়যন্ত্রমূলক কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়। এতে মেয়র হানিফের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য গুরুত্ব পেয়েছে। হেয়ার রোডের একটি বিলবোর্ডে মেয়র হানিফের অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন ঘটনাটি জানার পর দ্রুত এগুলো ঠিক করতে বলেন। এরপর বিকালেই বিলবোর্ডটি ঠিক করা হয়।

সর্বশেষ খবর