বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা

আবার জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চুর কিছুটা অসুস্থতাবোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চুর কিছুটা অসুস্থতাবোধ

আবদুল হাই বাচ্চু

প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে। পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের বিশেষ টিম গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আবদুল হাই বাচ্চু কিছুটা অসুস্থ বোধ করলে দুদক কার্যালয়ের চিকিত্সক ডা. জ্যোতির্ময় চৌধুরী তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুদকের এ কর্মকর্তা আরও বলেছেন,  আবদুল হাই বাচ্চু হাইপারটেনশনের রোগী হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে অসুস্থতা অনুভব করেন। দুদকের ডাক্তার তাকে চেকআপ করেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর কর্তব্যরত চিকিত্সক সুস্থ বলে নিশ্চিত করেন। বিরতি দিয়ে ফের তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন আবদুল হাই বাচ্চু। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। ঋণ কেলেঙ্কারির এ ঘটনায় দুদকের এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে গত ২২ নভেম্বর থেকে। এর আগে গত রবিবার পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দল। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। মামলায় অভিযোগ তোলা হয় যে, অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু গতকাল বলেছেন, আমি ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। ঋণের বিষয়ে ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আরও রয়েছে ঋণ অনুমোদন কমিটি। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের পূর্ব সম্পর্ক ছিল না। ঋণের সব নথি পরীক্ষা করলে সব কিছুর অবসান হতে পারে বলে আবদুল হাই বাচ্চু গতকাল দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন। দুদকের আরেক মামলায় বরখাস্ত ডিএমডিসহ আসামি তিনজন : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় যোগ হলো নতুন আরও একটি মামলা। গতকাল মামলাটি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ব্যাংকটির বরখাস্ত ডিএমডিসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর বংশাল থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আসামি হলেন ইকসল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম, চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেসিক ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্ত ডিএমডি বাবুবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সেলিম। মো. সেলিম ৪০টির মতো মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলায় ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১০ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর এ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে মোট ৫৭টি মামলা দায়ের হলো। এ ব্যাপারে বাদী সিরাজুল হক বলেন, বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলাটি হয়েছে। আগের ৫৬টি মামলার পর এ মামলাটি দায়ের হলো। সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনুসন্ধানে আসামি করা না হলেও তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পেলে আসামি করা হবে।

মামলায় অভিযোগ বলা হয়েছে : আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আগে বিক্রি করা জমি বন্ধক দিয়ে বন্ধককৃত জমির অতিরিক্ত মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র গ্রহণ না করে ও যথাযথ যাচাই না করে ঋণ মঞ্জুরের শর্ত ভঙ্গ করে বেসিক ব্যাংক বাবুবাজার শাখা থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলায় টার্ম লোন ও সি সি হাইপো ঋণের কথা বলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯/৪৬৮/১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়।

সর্বশেষ খবর