রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গো য়ে ন্দা কা হি নী ৯৯

খুন করেই ‘নিখোঁজ’ বিজ্ঞাপন

মির্জা মেহেদী তমাল

খুন করেই ‘নিখোঁজ’ বিজ্ঞাপন

মানবিক সাহায্য সংস্থার হিসাবরক্ষক শামীমা আক্তার হ্যাপী হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন। অফিসে যাওয়ার পর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্বামী মুকুল হোসেন মোল্লা স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায়। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব স্থানেই স্ত্রীর খোঁজ করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। থানা পুলিশ তার স্ত্রীর কোনো খোঁজখবর করতে পারছে না। মুকুল সাভারের একটি প্যাকেজিং কারখানার মালিক। ঘটনাটি সাভার এলাকার। ঘটেছে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। ৭ জানুয়ারি শামীমা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন মুকুল সাভার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঠিক সেদিনই কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ একজন অজ্ঞাত নারীর মাথা উদ্ধার করে। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জ থানা ওই নারীর পরিচয় উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে। এদিকে মুকুল তার স্ত্রীকে না পেয়ে হতাশ। কী করবেন কোথায় যাবেন, কোথায় তার প্রিয় স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাবে, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে তিনি ১৩ ও ২০ জানুয়ারি দুটি পত্রিকায় স্ত্রীর ছবি দিয়ে নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনের ছবি দেখে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করা নারীর মাথার সঙ্গে মিল খুঁজে পায়। তারা সাভার থানা পুলিশকে জানালে ওই মাথাটি শামীমার বলে শনাক্ত করা হয়। পুলিশ এখন খোঁজ করতে থাকে শামীমার দেহের বাকি অংশ এবং খুনিকে। কিন্তু খুনির খোঁজ পায় না পুলিশ। দিন যায় খুনি ধরা পড়ে না। শামীমার পরিবার পুলিশের কাছে ধরনা দিতে দিতে হয়রান হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে মুকুলের মধ্যে স্ত্রীর খুনিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে যেমন আগ্রহ ছিল, আস্তে আস্তে সেটি কমতে থাকে। এ বিষয়টি চোখে পড়ে শামীমার পরিবারের সদস্যদের। মুকুল তাদের এড়িয়ে যেতে থাকেন। তারা পুলিশকে জানান মুকুলের এই আচরণের খবর। একসময় পুলিশও তাকে নজরদারি করতে থাকে। ২৬ জানুয়ারি মুকুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জেরার মুখে প্রথম দিকে স্বীকার না করলেও একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে খুনের আসল রহস্য। পুলিশ জানতে পারে, কীভাবে কেন শামীমাকে হত্যা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ তিন টুকরো করে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হ্যাপীর লাশের আরও দুটি টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। মুকুল জেরার মুখে বলেন, ‘বিয়ের আগে সাভারে নীলুফার নামে এক মহিলার বাসায় সাবলেট থাকতাম। সেখানে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নীলুফার তার স্বামীর সঙ্গে দুই মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন। একপর্যায়ে আমি বিয়ে করে একই এলাকায় বাসা ভাড়া নিই। তখনো আমাদের পরকীয়া চলছিল। নীলুফা আমাকে প্রায়ই বলত, বউ নিয়ে সামনে ঘুরলে তার ভালো লাগে না। সে বলত, একদিন আমি দুজনকেই খুন করব। ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি শামীমাকে নিয়ে কারখানায় যাই। সে সময় কারখানায় বিদ্যুৎ না থাকায় কর্মচারীদের কেউ ছিল না। কারখানায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নীলুফার আমার স্ত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরে। এ সময় আমি শামীমার পা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করি। পরে নীলুফারের পরামর্শে গুম করতে মরদেহ তিন টুকরো করে বস্তায় ভরি। এরপর দুজন ট্যাক্সি করে কেরানীগঞ্জের ইটাভাটা ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়ে আসি লাশ।’

বিচার : পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ঢাকার সাভারে এনজিও কর্মী শামীমা আক্তার হ্যাপী হত্যা মামলায় মুকুল হোসেন মোল্লা ও লাভলী আক্তার নীলুফারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২৯ নভেম্বর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান পাঁচ বছর আগের এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় আসামি মুকুল কাঠগড়ায় ছিলেন অনেকটাই নির্বিকার। অপর আসামি নীলুফার শুরু থেকেই পলাতক।

সর্বশেষ খবর