সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মোংলা বন্দরে অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সতর্ক করেছে ব্রিটিশ ক্লাব, রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা সরকারের

নিজামুল হক বিপুল

দক্ষিণের দ্বার হিসেবে পরিচিত মোংলা সমুদ্রবন্দরে পণ্য খালাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা। পণ্য খালাসে অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়ার কারণেই ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পণ্য খালাসে অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ না গুনলেও বন্দর জেটি থেকে বহির্নোঙর পর্যন্ত অতিরিক্ত স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানেও পণ্য খালাস করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দেশি-বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্কও আছে। স্থান সংকুলানের কারণে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে বিদেশি জাহাজ ভিড়তে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে এবং  মোংলা বন্দরকে দেশি-বিদেশি সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে সরকার মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন করেছে। কিন্তু এই দুই বন্দরে ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই রকম আইন থাকার কারণে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছেন মোংলার প্রতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পোর্ট লিমিটের ভিতর পণ্য খালাসে যে ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়া হয়, মোংলা বন্দরের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো। চট্টগ্রাম বন্দরে পোর্ট লিমিট বলতে জেটি থেকে শুরু করে বহির্নোঙর পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বহির্নোঙরে অ্যাংকারেজ করা কোনো কার্গো থেকে ল্যান্ডিং চার্জ নিচ্ছে না। জেটিতে যেসব পণ্যবাহী জাহাজ পণ্য খালাস করে এবং জেটি ব্যবহার করে শুধু তাদের কাছ থেকেই ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়া হয়। আর মোংলা বন্দরের ক্ষেত্রে এ নিয়ম একেবারেই বিপরীত। মোংলা পোর্ট লিমিটের ভিতর পণ্য খালাসে যে কার্গো থেকে ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রে শুধু জেটিতেই নয়, বহির্নোঙরে যেসব পণ্যবাহী জাহাজ বা কার্গো অ্যাংকারেজ করে পণ্য খালাস করছে তাদেরও ল্যান্ডিং চার্জ দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পোর্ট আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও মোংলা উভয় সমুদ্রবন্দরেই প্রতি টন পণ্য খালাসে ল্যান্ডিং চার্জ দিতে হয় ৬০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব মিলিয়ে প্রতি টনে গুনতে হয় ৬৯ টাকা। এক্ষেত্রে  মোংলা বন্দরে ৫০ হাজার টনের একটি কার্গোকে ল্যান্ডিং চার্জ দিতে হয় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এই পরিমাণ পণ্য খালাসে অতিরিক্ত কোনো ল্যান্ডিং চার্জই গুনতে হয় না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়ার ক্ষেত্রে পোর্ট লিমিটের মধ্যে থাকার পরও বহির্নোঙরে পণ্যবাহী জাহাজ বা কার্গো থেকে পণ্য খালাসে কোনো ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়া হয় না। এ হিসেবে মোংলা পোর্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যয়বহুল, অনেকটা গলার কাঁটা। এ কারণে মোংলার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, পোর্ট লিমিটের মধ্যে থাকলেও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি চট্টগ্রামের মতো বহির্নোঙরে ল্যান্ডিং চার্জ না নেয় তাহলে মোংলা বন্দরেও পণ্যবাহী জাহাজের দীর্ঘ লাইন পড়ে যাবে। বছরের পুরো সময় জুড়ে ব্যস্ত থাকবে মোংলা পোর্ট।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে লন্ডন পি অ্যান্ড আই নামের একটি সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ব্রিটিশ জাহাজের বীমা করে থাকে। গত ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই হুঁশিয়ারি প্রতিবেদনে তারা বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার ক্ষেত্রে জাহাজগুলোর বিপন্ন হওয়ার প্রবণতার কারণে বন্দরটি আন্তর্জাতিক ‘হট স্পট’-এ পরিণত হয়েছে। ক্লাবটি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে যায় এরকম জাহাজের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিপুলসম্ভার বহনকারী জাহাজের পণ্য হালকা নৌকায় তোলা হচ্ছে। এর ফলে বহির্নোঙর এলাকায় জাহাজ জট বেড়েই চলেছে।

ক্লাবটি জানায়, নোঙর এলাকায় গড়ে ৬০ থেকে ৯০টি পর্যন্ত জাহাজ পড়ে থাকে। এর ফলে বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। বর্ষা  মৌসুমে প্রচণ্ড সে াতের মুখে পড়তে হয় জাহাজগুলোকে। এর প্রভাবে নোঙরকরণ হয়ে যায় দুর্বল। ক্লাবটি বলছে, এমন পরিস্থিতিতে ওই বন্দরে নোঙর করার সময় নাবিকদের সাবধানতা অবলম্বন অপরিহার্য। কারণ জাহাজে জাহাজে ছোটখাটো সংঘর্ষ, জাহাজ আটকে যাওয়া এবং তত্সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার ঝুঁকির ব্যাপারে ক্লাবটি সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়া কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মোংলা বন্দরে অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ নেওয়ার কারণে সেখানে জাহাজ ভেড়ার সংখ্যা কমে আসছে। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর