সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
জোটে জোটে আগামী ভোট

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান ১৪ দলের শরিকরা

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক নেতারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলতে চান। ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠক হয়। এরপর আর জোট প্রধানের সঙ্গে শরিক দলের নেতাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। বৈঠকে জোটের আসন বণ্টন ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে করণীয় বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা চান তারা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর ১৪ দল গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়। নানামুখী চেষ্টার ফলে পরের বছর ২৩ দফা ঘোষণা সামনে রেখে বাম প্রগতিশীল জোট ১১ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ মিলে ১৪ দল গঠিত হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (একাংশ) এ আটটি দল ১৪ দলে থেকে যায়। ফলে সেই সময়ে ১৪ দল মূলত ১১-দলীয় জোটে পরিণত হয়। পরে গণফোরাম জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এতে ১৪ দল ১০-দলীয় জোটে পরিণত হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনকে জোটে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে জাসদ ভেঙে দুটি আলাদা জাসদ গঠিত হয়। দুই জাসদই বর্তমানে ১৪ দলে রয়েছে। ফলে জোটটিতে এখন ১৩টি দল রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচিতে জোটগত অংশ গ্রহণ, বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয়ভাবে জনসভা, মানববন্ধন, গণজমায়েত, পথসভাসহ নানা কর্মসূচি, জেলা ও বিভাগীয় সফর করছেন ১৪-দলীয় জোটের নেতারা। এ ছাড়াও বন্যা, পাহাড়ধস, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা যেখানেই ঘটছে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন তারা। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনা সৃষ্টি করছেন ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ১৪-দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সমসাময়িক রাজনীতি বিষয়ে কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে। এতে যোগ দিতে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, মাসে এক বা একাধিকবার ১৪-দলীয় জোটের বৈঠক হলেও শরিক দলের নেতারা জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান। এ জন্য তারা জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জোটের মুখপাত্রও কিছুদিন আগে তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরলেই বৈঠক করা হবে। কিন্তু ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ ও পরবর্তীতে অপারেশন করার ফলে বৈঠকটি এখনো করা হয়নি। তবে খুব শিগগিরই বৈঠক হতে পারে জোট সূত্র জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের প্রধান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন জোটগতভাবে আমাদের বৈঠক হয়নি। তবে কিছুদিন আগে জোট প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলেও তিনি হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তা হয়ে ওঠেনি। আজকের বৈঠকে জোটের মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইব আমরা কবে নাগাদ বৈঠক করতে পারছি। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর এক বছর বাকি আছে। আগামী নির্বাচন এবং বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় নিয়ে জোট প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হলে আমরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাব। আশা করব— খুব শিগগিরই জোট প্রধানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জোটগত করা হবে। গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় পরিচালিত করতে হলে আদর্শিক জোট ১৪ দল একসঙ্গেই নির্বাচন করবে। এ জন্য এখন থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জোট প্রধান আমাদের সম্পর্কে সব সময়ই খোঁজখবর রাখেন। ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা করব।

সর্বশেষ খবর