একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আরও বড় বিজয় পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, আমি একটি জরিপ করেছি। তাতে এই ফল পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘বিজ্ঞানসম্মত’ জরিপে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। তার মতে, ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো কোনো দল বাংলাদেশে নেই। গতকাল বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা, সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। তিনি দলের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কথা শোনেন ও নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করার পরামর্শ দেন। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক অব্যাহত রাখা ও নির্বাচনী প্রচারণার কাজে তিনি সক্রিয় থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, আমি প্রার্থী হচ্ছি না। এটি আপনাদের আগাম জানিয়ে রাখছি। আমার উদ্দেশ্য দলকে ক্ষমতায় আনা। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভ আমার নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আগামী এক বছরে আমাদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন রয়েছে। সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচার করতে পারলে আমরাই ক্ষমতায় আসব। দলের শৃঙ্খলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে গ্রুপিং-লবিং থাকে; তবে আন্দোলন বা নির্বাচনের সময় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় নিয়ে আমি চিন্তা করি না, কিন্তু ষড়যন্ত্র আছে। খেয়াল রাখতে হবে ৫ জানুয়ারির (গত সংসদ নির্বাচন) মতো কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। ওই সময়ের মতো আগুন-সন্ত্রাস যেন না ঘটে। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, সেটি বড় কথা নয়। নির্বাচনটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে কিনা, সেটিই বড় কথা। আমরা কাউকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করতে পারি না। যে জরিপটি করিয়েছেন সেটা কীসের ভিত্তিতে- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে জরিপ করানো হয়েছে। এতে আমিও জড়িত ছিলাম। আমি মনে করি, এটি ওয়ান অব দ্য মোস্ট অ্যাকুরেট জরিপ।’ প্রতি বছর জরিপ করা হয় বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, বিগত নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করার জন্য মাঠে ছিলাম। এখন থেকে ধরে নিতে পারেন-আমি মাঠে নেমে পড়েছি। আগামীতে কোথায় কোথায় যেতে হবে-কী করণীয় তা আমি করব। দলকে ক্ষমতায় আনব।
সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের ১২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অভিযোগকে বিএনপি মহাসচিব সম্প্রতি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘প্রমাণ হয়েছে তারা কীভাবে মিথ্যা বলে। এফবিআই বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। সেখানে ফখরুল সাহেব কীভাবে বলেন যে, দুর্নীতি নেই। তাদের দুর্নীতির টাকা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। নিশ্চয় তাদের আরও (দুর্নীতির) টাকা আছে, ধরা পড়বে। বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী এক বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট যেন কোনো নাশকতা করতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জয়। তিনি বলেন, আমরা এত ভালো করি, কিন্তু জনগণের মধ্যে সেগুলো তেমনভাবে প্রচার নেই। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা অনেক ভালো। অন্যদিকে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভঙ্গুর হলেও তারা মিডিয়ায় সরব রয়েছে। আমাদেরও মিডিয়াবান্ধব হতে হবে। দলের প্রচার-প্রচারণা বাড়িয়ে দিতে হবে।
‘ডাক টাকা’ সেবার উদ্বোধন : ‘ডাক টাকা’ নামে নতুন একটি সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। মাত্র দুই টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা নিয়ে চালু করা এ সেবায় এক বছরের মধ্যে দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষকে নিয়ে আসাই ডাক বিভাগের লক্ষ্য। গতকাল সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ‘ডাক টাকা’ প্লাটফর্মের ?উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা টাঙ্গাইলের মর্জিনা বেগম নামে এক নারীর নামে ‘ডাক টাকা’র হিসাব খুলে এ সেবার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি সার্ভিস আমরা ডিজিটালাইজ করছি। আমরা চাই মানুষের জীবন সহজ করতে। সবকিছু যাতে মানুষ মোবাইলে, অনলাইনে পেতে পারে। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস ডিজিটালাইজ না করা পর্যন্ত এটা সম্ভব হবে না।’ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘দেশে আট হাজারের বেশি ডাকঘর আছে। সব জায়গায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাংক নেই। এই ডিজিটাল সেবা মানুষের হাতে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে চিন্তা আমাদের ছিল। আমরা ঠিক করলাম ডাকঘর দিয়ে এই সেবা মানুষের কাছে পৌঁছাব। ঘরে বসে তারা টাকা লেনদেন করতে পারবেন, সরকারি ভাতার টাকা ডিজিটালি খরচ করতে পারবেন। ‘ডাক টাকা’ প্লাটফর্ম হচ্ছে সে চেষ্টা বাস্তবায়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ।’তিনি বলেন, ‘আজ এই সফটওয়্যার দেখে আমরা খুব আনন্দিত। আশা করি এটা সাকসেসফুল হবে। মানুষ যত বেশি এটা ব্যবহার করবে তত বেশি সেবা পাবে। আমি এটা দেখে খুবই আনন্দিত যে, দুই টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা হলো।’ এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘ডাক টাকা’ সেবার মাধ্যমে ২০১৮ সালের মধ্যে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা তিন কোটি মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডাক বিভাগকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করা হবে। ডাক বিভাগের এ সেবায় টেকনিক্যাল পার্টনার ও পেমেন্ট সুইচ প্রোভাইডার (আইটিসিএল) ডি-মানির ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া বশির কবির অনুষ্ঠানে জানান, এই সেবায় খুব সহজেই ‘ডাক টাকা’ অ্যাকাউন্ট খুলে পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা ও জমা দেওয়া যাবে। ডাক টাকা একটি ডিজিটাল ওয়ালেট। এর মাধ্যমে কার্ড বা অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটারও সুযোগ দেওয়া হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘ডাক টাকা’র বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক ও ডি-মানির চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।