বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কে এই আকায়েদ উল্লাহ?

ট্রাম্প বললেন কঠিন অভিবাসন আইনের কথা

প্রতিদিন ডেস্ক

কে এই আকায়েদ উল্লাহ?

নিজের হাতে তৈরি বিস্ফোরকের সাহায্যে অসহায় মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহর (২৭) প্রতি প্রবাসীরা ধিক্কার জানাচ্ছেন। ‘আকায়েদের সন্ত্রাসী কর্মের দায় জাতিগতভাবে বাংলাদেশিরা কখনই নিতে পারে না। সন্ত্রাসীর কোনো জাত, ধর্ম বা গোষ্ঠী পরিচয় নেই। ওরা সন্ত্রাসী, মানবতা ও সভ্যতার শত্রু’—এমন মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য (অ্যাসেম্বলি ম্যান) ডেভিড ওয়েপ্রিন। খবর এনআরবি নিউজের। কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, ‘আকায়েদ উল্লাহর প্রতি সংঘবদ্ধভাবে ঘৃণা প্রদর্শন করতে হবে। ওরা বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ওরা মানবতার দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হয়েই থাকবে’। বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ার এবং পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের মধ্যে পাতাল পথে ১১ ডিসেম্বর সকালে পাইপ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অসহায় মানুষদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টাকালে নিজের হাতে তৈরি বোমা বিস্ফোরণে আকায়েদ উল্লাহ আহত হয়ে গ্রেফতার হয়েছে। ২০১১ সালে পারিবারিক কোটায় অভিবাসনের ভিসায় মা-বাবা-ভাই-বোনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসে সন্দ্বীপের সন্তান আকায়েদ উল্লাহ। এর ফলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। এমন অবস্থায় এ দিন অপরাহ্নে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত তিন শতাধিক বাংলাদেশি অফিসারের সংগঠন ‘বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’ তথা বাপার উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে বাপার প্রেসিডেন্ট লে. শামসুল হক সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান, ‘সব ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই কিছু দুষ্টু লোক রয়েছে। সে জন্য ওই সম্প্রদায়ের সবাইকে ‘দুষ্টু’ হিসেবে মনে করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তাই সবাই যেন সতর্কতার সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন-যাপন অব্যাহত রাখেন।’ বাপার সেক্রেটারি হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আকায়েদ উল্লাহর কঠোর শাস্তি হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী। আকায়েদের মতো দুষ্টু লোকদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে সঙ্গে সঙ্গে যেন নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন অথবা সিটির হটলাইনে জানানো হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, ‘এমন আচরণে লিপ্ত কোনো ব্যক্তি আমাদের সমর্থন কখনো পাবে না। আমরা সব সময় ওদের প্রত্যাখ্যান করেছি। আকায়েদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, অপরাধী প্রমাণিত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা সবাই। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন ব্যারিস্টার ইশরাত সামী, মাজেদা এ উদ্দিন, রুহুল আমিন সিদ্দিক, ময়নুল ইসলাম, তারেক হাসান খান, আবদুর রহিম হাওলাদার, আবদুল হাই জিয়া, কামাল ভূইয়া, সিটি মেয়রের প্রতিনিধি ড. সারা সাঈদ, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ প্রমুখ। এদিকে এ সন্ত্রাসী কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সদর দফতরের উদ্ধৃতি দিয়ে কমিউনিটি লিডার কাজী আজম এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আকায়েদ উল্লাহর আচরণের পরিপেক্ষিতে কেউ যদি কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে অশোভন আচরণ কিংবা কোনো গাল-মন্দ করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন হটলাইনে ফোন করে জানানো হয়। পুলিশের হটলাইন : ১-৮০০-৬৯২-৭২৩৩।

কে এই উল্লাহ : সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের ভুটান তালুকদার বাড়ির সন্তান আকায়েদ উল্লাহর বাবা মো. সানাউল্লাহ রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগে বসবাস করতেন। চামড়ার ব্যবসা ছিল তার। সে সুবাদে আকায়েদ উল্লাহ্ও হাজারীবাগেই বড় হয়েছে। সেখানকার ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল। শিবিরের বিভিন্ন সাংগঠনিক তত্পরতায় তার সরব উপস্থিতিও ছিল। অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর এখানে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম উম্মাহ কিংবা একই শ্রেণির প্রবাসীদের নিয়ে কর্মরত কোনো সংগঠনের সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহকে দেখা যেত না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আকায়েদ উল্লাহ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত এক প্রবাসী এসব তথ্য জানিয়েছেন। আকায়েদ উল্লাহ বরাবরই নিজের মধ্যেই নিবিষ্ট থাকত। মাঝে-মধ্যে মসজিদে গেলেও কারও সঙ্গে কথা বলত না। ব্রুকলিনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে সন্দ্বীপ প্রবাসীদের কোনো কর্মকাণ্ডেও তার উপস্থিতি ঘটেনি কখনো। এলাকাবাসী জানান, নিউইয়র্কে এক বাংলাদেশি নির্মাণ ঠিকাদারের অধীনে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করত আকায়েদ। পাশাপাশি তার ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্সও ছিল। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে (পেশাগতভাবে) তারাও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন সন্ত্রাসে লিপ্ত হওয়ার সংবাদে। বাংলাদেশি ওই নির্মাণ ঠিকাদার বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করায় আকায়েদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। প্রবাসীরা আরও জানিয়েছেন, দুই বছর আগে তার বাবা সানাউল্লাহ এই নিউইয়র্কেই ইন্তেকাল করেন। আকায়েদের এক ভাই, বোন এবং মা রয়েছেন নিউইয়র্কে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন সোমবার অপরাহ্নে। আহত আকায়েদকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ম্যানহাটনের বেলভিউ হাসপাতালে। এদিকে, আকায়েদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ফেডারেল সরকারের পাঁচটি এবং স্টেট সরকারের তিনটি অভিযোগ রয়েছে। হামলা চেষ্টার আগে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘ট্রাম্প, তুমি তোমার দেশকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছ।’

সেখানে তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষোভে সে নাকি আমেরিকানদের হত্যায় প্রবৃত্ত হয়েছিল।’

 

আকায়েদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ এবং প্রচলিত আইনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা। ‘অ্যালায়েন্স অব সাউথ-এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ তথা এসালের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ, মার্কিন আইটি সেক্টরে চাকরির উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সারা আমেরিকায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ‘পিপুলএনটেক’র নির্বাহী প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিফ, শিকাগোর বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল মনির চৌধুরী, মানবাধিকার আইনজীবী অশোক কর্মকার, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা ড. পার্থ ব্যানার্জি, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক ও মূলধারার ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল, ফোবানার নির্বাহী চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব জাকারিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক লীগের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা ও নির্মাণ ব্যবসায়ী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারী এবং যুগ্ম সম্পাদক ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল কাদের মিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মোর্শেদা জামান, কমিউনিটি লিডার ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক মোহাম্মদ এন মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির নেতা ও ডেমোক্র্যাট ওসমান চৌধুরী প্রমুখ পৃথক পৃথকভাবে আকায়েদ উল্লাহর আচরণের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশিরা সব সময়ই সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করে তারা আসলে মানুষ নয়, শয়তান।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর