রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমঝোতা প্রয়োজন গণতন্ত্র রক্ষায়

বাদল নূর

সমঝোতা প্রয়োজন গণতন্ত্র রক্ষায়

বিমল বিশ্বাস

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস বলেছেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। গণতন্ত্র রক্ষা ও সুশাসনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। গত মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতপার্থক্য থাকলেও বুর্জুয়া রাষ্ট্র ও সমাজ রক্ষায় বাজার অর্থনীতির পক্ষে তাদের ঐকমত্য রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের যে মতপার্থক্য রয়েছে, তা এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরির লক্ষণ। এ কারণে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। তাই এখন যেটুকু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তাকে রক্ষা করতে হলে দুই দলের সমঝোতা প্রয়োজন। অন্যথায় গঠনতন্ত্র  ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিমল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক দল। এরা লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থসেবী এবং বুর্জুয়া সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দল। তবে আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আর বিএনপি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে ঐক্য গড়েছে। আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসী। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে আপস করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। যেমন সাম্প্রতিককালে হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে আপস করতে তাদের বাধেনি। অন্যদিকে বিএনপি মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। মনে রাখতে হবে বিশ্বের কোনো দেশেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামসহ যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের আদর্শিক রাখিবন্ধন বাংলাদেশের জন্য আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিপদ। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের সব দলের আস্থা অর্জন করতে পারবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ও আইনগত যে ক্ষমতা রয়েছে, তাকে নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়িত করলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবে। রংপুর সিটিসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতার এক ধরনের পরীক্ষা হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত হবে। সেক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন না হলে রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করতে পারে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চলছে, তা পরিবর্তনের জন্য আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ জরুরি। দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের যে সব আইন রয়েছে, তা কার্যকরী করলে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রকে অনেকখানি এগিয়ে নেওয়া যায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সমঝোতায় আসতে হবে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে। কারণ এত চাপ সহ্য করা বাংলাদেশের সাধ্যের বাইরে।

সর্বশেষ খবর