সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে নতুন ইতিহাস

ভারতকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি কিশোরীরা

আসিফ ইকবাল

ভারতকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি কিশোরীরা

৪৬ বছর আগে ১৬ ডিসেম্বর একটি স্বাধীন ভুখণ্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই ডিসেম্বরে বিজয়োৎসব পালন করে গোটা দেশ ও জাতি। বিজয়ের মাসে গোটা জাতি যখন বিজয়োৎসব পালনে ব্যস্ত, তখন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবুজ দেশটিকে আরও একটি বিজয় উপহার দিলেন শামসুন্নাহার, মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, তহুরা খাতুনরা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল পৌষের দুপুরে কমলাপুর বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে           ফাইনালে শামসুন্নাহারের একমাত্র গোলে হারিয়েছে ভারতকে। আশ্চর্যজনক হচ্ছে, টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে ১৩ গোল করে একটিও হজম করেনি বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় মোসাম্মৎ আঁখি খাতুন এবং সেরা গোলদাতা ভারতের প্রিয়াঙ্কা দেবী। দক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে চার দেশ। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়া অংশগ্রহণকারী বাকি তিন দল ভারত, নেপাল ও ভুটান। চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ভারতই ছিল ফেবারিট। ফিফা রাঙ্কিংয়ে ভারত ৫৬, বাংলাদেশ ১০০। কাগজে কলমে ভারত ফেবারিট থাকলেও গোলাম রব্বানী ছোটনের সুদক্ষ কোচিংয়ে দারুণ একটি দল হিসেবে গড়ে উঠে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর সেটা আরও পরিষ্কার হয়। যখন লিগ পর্বের তিন ম্যাচে নেপালকে ৬-০, ভুটানকে ৩-০ ও ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে। টানা তিন জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে গতকাল দুপুরে কমলাপুরের অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলতে নামে ছোটনের শিষ্যরা। লিগ পর্বে যে ধারায় ফুটবল খেলেছিলেন, গতকালও সেই নৈপুণ্য ধরে রাখেন শামসুন্নাহার, তহুরা, মারিয়া, মনিকারা। শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পরে ভারতের উপর। আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ৬ মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় গোল পায়নি। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে আনুচিং মগিনি হেড করেন। কিন্তু বলটি বারপোষ্টের উপর দিয়ে চলে যায়। তিন মিনিট পর ভারতের পবিত্রা মুরগেসানের ফ্রি-কিক সোজা গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারের গ্লাভসে জমা পড়ে। এরপর থেকেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছোটনের শিষ্যরা। অলআউট ফুটবল খেলে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে ভারতকে। ২২ মিনিটে ম্যাচের অন্যতম সুযোগ নষ্ঠ করেন আনুচিং। ভারতীয় গোলরক্ষককে একা পেয়েও জালে ফেলতে পারেননি আনুচিং। ৩২ মিনিটে ডি বক্সে ঢুকেও গোল পাননি তহুরা। তখন মনে হচ্ছিল প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবেই শেষ হবে। কিন্তু ৪২ মিনিটে রক্ষণভাগের শামসুন্নাহার দক্ষিণ এশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা গোলটি করেন। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে শামসুন্নাহার বল বাড়িয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো আনুচিংকে। আনুচিং শট নেন। বল ভারতীয় গোলরক্ষকের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি শট নিয়ে গোটা দেশকে আনন্দ ও উৎসব করার উপলক্ষ করে দেন শামসুন্নাহার (১-০)। গোলের পর মাঠে উপস্থিত হাজার ১২ দর্শক তখন মুহুর্মুহু করতালিতে ?‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ কোরাস গেয়ে উৎসাহিত করতে থাকে যুব মহিলা ফুটবলারদের। এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে জমিয়ে তোলে ফাইনাল। ভারত সমতায় ফেরার চেষ্টা করলেও বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল মারিয়াদের পায়েই। ৫৭ মিনিটে আনুচিংয়ের ডান পায়ের শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ভারতীয় গোলরক্ষক। ৬১ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করে তহুরা। মধ্য মাঠ থেকে মার্জিয়ার মাইনাস ধরে আনুচিং আলতো টোকায় বাড়িয়ে দেন তহুরাকে। তহুরা বল ধরে প্রথমে একজনকে কাটান। এরপর গোলরক্ষককে কাটাতে যেয়েই বলের অ্যাঙ্গেল হারিয়ে ফেলেন। ফলে ফাঁকা গোল পেয়েও কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। তহুরা সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করায় ম্যাচের ফল শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলেই শেষ হয়। অবশ্য শেষ দিকে ভারত গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। কিন্তু লাভ হয়নি। বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়ে গোটা দেশকে বিজয়োৎসব করার জয় উপহার দিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর