সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাচ্চু ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব চেয়ে দুদকের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল এ চিঠি দেওয়া হয়।

এর আগে তৃতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ না করার এক মাসের সময় চেয়ে আবদুল হাই বাচ্চুর করা আবেদন নাকচ করা হয়। তাকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। আবদুল হাই বাচ্চু দুদকে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হাই বাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গতকাল সংস্থাটির উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদক জানায়, গত ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন করেন আবদুল হাই বাচ্চু। চিঠিতে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, অসুস্থ হয়ে আবদুল হাই বাচ্চু রাজধানীর যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, সে হাসপাতালে তিনি মাত্র একদিন ছিলেন। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বেসিক ব?্যাংকের সাবেক চেয়ারম?্যানকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজেকে দোষী মনে করি না। এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান সাবেক এ সংসদ সদস?্য। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্র্রতি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। এর আগে ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা ৫৬টি মামলার বিষয়ে আবদুল হাই বাচ্চুকে দুদকের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাকি মামলাগুলোর বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর