শিরোনাম
শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার রুবি ভিলায় তিন ‘জঙ্গি’র ক্ষতবিক্ষত লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার রুবি ভিলায় তিন ‘জঙ্গি’র ক্ষতবিক্ষত লাশ

লাশ গাড়িতে তুলছেন র‍্যাব সদস্যরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় (রুবি ভিলা) র‍্যাবের অভিযানে তিনজন নিহত হয়েছে। র‍্যাব বলছে, তিনজনই জেএমবি সদস্য। ছয়তলা বাড়িটির পঞ্চমতলায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে অভিযান চালায় র‍্যাব। গতকাল সকাল ৭টার দিকে র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে দোতলায় রেখে ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে। পরে ভবনের ভিতর থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সম্ভবত তারা নিজেরাই গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এর মধ্যে জাহিদ ও সজীব নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তবে সে দুটি পরিচয়পত্রের ছবি একই ব্যক্তির। ধারণা করা হচ্ছে, দুজনই একই ব্যক্তি। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ও কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ৪ জানুয়ারি এ তিনজন বাসাটি ভাড়া নেয়। এক সপ্তাহ আগে নিহতরা ওই বাড়িতে উঠলেও বাড়ির মালিক এটি জানেন-ই না। মেস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত রুবেল। সে-ই মূলত মেস মেম্বারদের ঢোকাত, বের করত। বাড়িওয়ালা খোঁজ নিয়ে দেখেননি রুবেল কাকে ঢোকাচ্ছে, কাকে বের করছে। জিজ্ঞাসাবাদে এতটুকু পাওয়া গেছে। পশ্চিম নাখালপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার‍্যালয় থেকে ১০০ গজ দূরে ‘রুবি ভিলার’ অবস্থান। সংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন বা ন্যাম ভবনের কাছেই এটি। ছয়তলা বাসার পঞ্চমতলায় মেস ছিল। তবে ওই বাড়িতে আগেও অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ ও র‍্যাব এর আগে আরও তিনবার (২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৭) সেখানে অভিযান চালিয়েছে। এ নিয়ে মোট চারবার একই বাড়িতে অভিযান চালানো হলো।

আগের অভিযানেও বেশ কয়েকজন ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযান চলাকালে গ্যাসের চুলায় গ্রেনেড রেখে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। পুরো ঘরের মধ্যে তারা গ্যাস ছেড়ে দিয়ে গ্রেনেডটিকে চুলার মধ্যে রেখে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। যাতে গোটা কক্ষ বিস্ফোরিত হয়। আল্লাহর অসীম রহমতে তা হয়নি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, এ রকম জায়গায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে, কোনো নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এর ভিত্তিতে ছয়তলা ভবনটির পঞ্চমতলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাড়িটি ঘিরে ফেলার পর একটানা প্রায় ৪০ মিনিট গোলাগুলি চলে। ওই বাড়ি থেকে র‍্যাবকে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আস্তানা থেকে তিনটি লাশ ও দুটি পিস্তল, তিনটি আইইডি বোমা, বিস্ফোরক জেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি লাশের নিচে থেকে একটি গ্রেনেড, গ্যাসের চুলার ওপর থেকে একটি গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তারা চুলার উপরে যে গ্রেনেডটি রেখেছিল, তা বিস্ফোরিত হলে ভয়াবহ ঘটনা ঘটত। তবে আমরা গ্যাসের ঘ্রাণ পেয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিই। পশ্চিম নাখালপাড়ার ১৩/১ হোল্ডিং নম্বরের রুবি ভিলায় গিয়ে দেখা যায়, ষষ্ঠতলাবিশিষ্ট বাড়িটির পঞ্চম তলায় তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ এই দুই ফ্লোরে মেস করে ভাড়াটিয়ারা থাকেন। সবকটি ফ্ল্যাট মিলিয়ে ২০ জনের মতো থাকতেন। এর মধ্যে পঞ্চম তলার জঙ্গিরা যে ফ্ল্যাটে ছিল সেখানে সাতজন ছিল। তিন জঙ্গি ছাড়া বাকিরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। তিন জঙ্গি একটি কক্ষে থাকত। জঙ্গিদের লাশ সরানোর পর কক্ষটির ভিতরে ঢুকে দেখা গেছে, একটি চৌকির ওপর কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মেঝেতে পড়ে আছে দুটি পিস্তল, ৪৪টি গুলির খোসা, সাদাকালো রঙের তিনটি স্কার্ফ।  র‍্যাব জানায়, নিহত তিন জঙ্গি জেএমবির সদস্য। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জাহিদ নামের এক জঙ্গি বাড়িটি ভাড়া নেয়। ভাড়া নেওয়ার সময় জানিয়েছিল, সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। দুই ভাইসহ সে একটি কক্ষে থাকার কথা বলে বাসায় ওঠে। ৪ জানুয়ারি জাহিদ একা বাসায় উঠেছিল। ৮ জানুয়ারি বাকি দুজন আসে। ওই ফ্ল্যাটে যারা থাকতেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরে আসা দুজনকে তারা বাসা থেকে বের হতে দেখেননি। জাহিদ সকালে বাসা থেকে বের হতো, রাতে আসত। সেখান থেকে তাদের ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট শেষ হয়েছে। আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ১৪ আগস্ট এই বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। তখন অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুনছি তারাও জঙ্গি। এরপর তাদের কী হয়েছে আর জানি না। এসব কারণে তাদের এলাকায় কোনো মেস ভাড়া দেওয়া হয় না। জানা গেছে, বাড়ির মালিক সাব্বির হোসেন বিমানের ফ্লাইট অফিসার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি কেয়ারটেকার রুবেল দেখাশুনা করত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে র‍্যাব। এলাকাবাসী জানায়, একবার পুলিশ বাড়িওয়ালাকে গ্রেফতার করেছিল, পরে আবার ছেড়ে দেয়। 

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমরা (পুলিশ) ওই বাসায় অভিযান চালিয়েছিলাম। তখন জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা ছিল।

পশ্চিম নাখালপাড়ার এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে একটা শব্দ পাই। এর কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ। শীতের কারণে বাসার দরজা-জানালা সব বন্ধ ছিল। তাই শব্দ খুব আস্তে শোনা গেছে। আমরা প্রথমে ভেবেছি আতশবাজি হচ্ছে। পাশেই চ্যানেল আই-এর অফিস থাকায় প্রায়ই এমন আতশবাজি হয়। আমরা তাই ভেবেছিলাম। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে র‍্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অভিযান শেষ হয়েছে। জঙ্গি আস্তানা থেকে তিনটি লাশ বের করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তেজগাঁও থানা পুলিশ লাশ তিনটির সুরতহাল করেছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তিনটি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের কক্ষটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর