শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ১৩৩

দুধে ছিল বিষ

মির্জা মেহেদী তমাল

দুধে ছিল বিষ

স্যার, এক গ্লাস পানি! হুম, তোকে শুধু পানি না, সঙ্গে চা  দেব। দুই পিস বিস্কুটও দেব চায়ে চুবিয়ে খাওয়ার জন্য। তার আগে বল, কেন খুন করেছিস। কার কথায় করেছিস! স্যার, আমি কিছু জানি না। কাকে আমি খুন করব, কেন করব!

ও আচ্ছা! তুই সোজাভাবে বলবি না। ঠিক আছে, আমি এখান থেকে উঠে যাব। আমার পেছনে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে, তারা চলে আসবে আমার স্থানে। তারা বিস্কুট খাওয়াবে না। তোকে বিস্কুট বানিয়ে চায়ের মধ্যে চুবিয়ে রাখবে। আর চায়ের মধ্যে চুবিয়ে রাখলে বিস্কুটের কী হয় বুঝিস তো? যুবকটির নাম রনি।

২০১৫ সালের ১৪ মার্চ  জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে সকালে পুকুর থেকে গলায় রশি বাঁধা পলাশের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে পলাশ। সে উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের (হিন্দুপাড়া) এজাজ আহমেদের খামারবাড়ীতে ম্যানেজারের (কেয়ারটেকার) কাজ করত। পলাশের খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে থানায় নিয়ে জেরা করে। সে মুখ খুলে না। পলাশ তার স্ত্রী সনিকে নিয়ে খামারেই থাকত। অত্যন্ত সৎ প্রকৃতির হওয়ায় মালিক তাকে পছন্দ করতেন। খামারের গরু দেখার জন্য বাসা থেকে আধা ঘণ্টার জন্য বের হন। রাত ১২টায় বের হলেও সে আর বাসায় ফিরছিল না। তার স্ত্রী ভোর রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে দারোয়ানদের নিয়ে খুঁজতে থাকেন। ভোরে পলাশের লাশ  মেলে খামারের পুকুরপাড়ে। লাশ দেখে তার স্ত্রীর আহাজারিতে লোকজন চোখের পানি সেদিন ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশ আসে। তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু কূলকিনারা পায় না পুলিশ। ঘটনার দিন ঢাকা থেকে আসা পরিচয়ে ফরহাদ নামের এক যুবক গত দুই রাত ধরে ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার কাছ থেকে পুলিশ কোনো তথ্য পায় না।

দিন, সপ্তাহ মাস যায়। খুনের রহস্য খুঁজে পায় না। পলাশের বাবাসহ ঘটনাস্থলে আসা আত্মীয়-স্বজন পুলিশকে জানান, ঘটনাটি পলাশের স্ত্রীর পরকীয়া অথবা খামার মালিকের ব্যবসার জের ধরে ঘটতে পারে। পুলিশ খামারের মালিকের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য খুঁজে পায়নি। পুলিশ খেয়াল করে তার স্ত্রীকে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রনি নামের এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। রনির ফোন নম্বর খুঁজে পায় পুলিশ। পলাশের স্ত্রী সনিকে ধরে এনে জেরা করা হয়। প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে বলে সব ঘটনা। সনি জানায়, খামারে চুরির অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করেছেন পলাশ। রনি নামে এক যুবক সেই চাকরিচ্যুতের তালিকায় ছিল। রনি তার চাকরি ফিরে পেতে সনির কাছে যায়। পরে তাদের ঘনিষ্ঠতা হয় ও শারীরিক সম্পর্ক ঘটে। ঘটনার রাতে বিষ মেশানো দুধ দেয় পলাশকে। পলাশ তা খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রনি বালিশ চাপা দেয় পলাশের। সনি ধরে রাখে পা। পুলিশ হিলি থেকে ধরে আনে রনিকে। জেরা চলে। সব অস্বীকার করে। পরে সনিকে মুখোমুখি করা হলে আর অস্বীকার করতে পারে না রনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর