মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ স্থগিত যে কারণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অতিমাত্রার বাণিজ্যের কারণেই স্থগিত করা হয়েছে পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগ। একের পর এক বাণিজ্যের খবরে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের বিরক্তির কারণেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। গতকাল পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পক্ষে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বার্তায় এ তথ্য জানা যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। সূত্র বলছে, পুলিশে কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় এই বাণিজ্য। একেকজন কনস্টেবলের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে অগ্রিম নেওয়া হচ্ছিল। অনেক এলাকায় অর্ধেক টাকা নিয়োগের আগে, বাকি অর্ধেক নিয়োগ পাওয়ার পর এমন অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে চলছিল অর্থ আদায়। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে প্রার্থী সংগ্রহ এবং বাণিজ্যের টাকা সংগ্রহের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল একাধিক বিশ্বস্ত এজেন্ট। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরাও জড়িয়েছিলেন এই নিয়োগ-বাণিজ্যে। বাণিজ্যের বিষয়টি রীতিমতো ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছিল। অন্য একটি সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাণিজ্যের একটি ভাগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটি অংশে পৌঁছে যাচ্ছিল। তবে কনস্টেবল নিয়োগে এমপি-মন্ত্রীদের ‘ডিও’ লেটার বাণিজ্যের বিষয়টি এরই মধ্যে অবহিত হয়েছিল সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহল। একের পর এক এ ধরনের খবরে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেন তারা। এ বিষয়টি অবহিত করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হককে। এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে কি তদবির ছিল না? তবে গত কয়েক বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের কথা ওঠার কারণে এ বাহিনীর সাবেক প্রধান হিসেবে খুব বিব্রত বোধ করি। একটি ছেলে যখন টাকা দিয়ে নিয়োগ পাবে, তার প্রথম টার্গেটই হবে কীভাবে বিনিয়োগকৃত টাকাটা ওঠাবে। ৩০ থেকে ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে যন্ত্রণাই পাবে। তবে কয়েকটা জেলার এসপিরা যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গেই তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে জনগণ সহায়তাও পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, পুলিশের উচ্চপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। তবে তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। এ কারণে এসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রায় একই কথা বলেন আরেক সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ হাদিস উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপ কোন সময় ছিল না! নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ থাকলেই কি সংশ্লিষ্ট এসপিকে তা শুনতে হবে? নৈতিকতার শক্তি থাকলে তিনি তা অগ্রাহ্য করবেন এটাই নিয়ম। এতে করে সরকারের ইমেজই বাড়বে। ওই জেলায় না থাকলে সমস্যা কী। সর্বোচ্চ অন্য জেলায় বদলি হতে পারেন এই তো!’  নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ঢাকা জেলার এসপি ছিলাম। তৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তদবির না শোনার কারণে আমাকে অন্যত্র বদলি হতে হয়েছিল। তবে আমি আমার তৎকালীন আইজিপি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি ওই মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী তত্ক্ষণাৎ আমাকে বদলি করেননি। করেছিলেন ছয় মাস পর।’ হাদিস উদ্দীন বলেন, নিয়োগের বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে উচ্চ একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে তারাই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপিরা কোনো চাপে থাকবেন না।

সর্বশেষ খবর