বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আর্তমানবতার পাশে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

সিআরপি ও বাঁচতে শেখাকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান বললেন মানবতার সেবাই বড় ধর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর্তমানবতার পাশে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে ৫০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ ও সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরি টেলরকে—বাংলাদেশ প্রতিদিন

মানবতার সেবাই সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’ বলে মন্তব্য করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। মানবতার সেবায় কাজ করা দুটি সংগঠন ‘সিআরপি’ ও ‘বাঁচতে শেখা’র প্রধানদ্বয়ের হাতে গতকাল ৫০ লাখ টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘মানুষের সুদিনে পাশে থাকার মতো দুর্দিনেও এগিয়ে যেতে হবে। মানবসেবাই বড় ধর্ম। মানুষ হিসেবে অন্যের বিপদে পাশে থাকা মানবিক গুণগুলোর অন্যতম।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুটি সংগঠনের উদ্যোক্তা সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরি টেলর ও বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি দুই প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ভেলোরি টেলর ও অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বসুন্ধরা গ্রুপ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একসঙ্গে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় আগত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্মসম্পাদক আবু তাহের, উপসম্পাদক মাহমুদ হাসান, প্রধান বার্তা সম্পাদক মাশুক চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক কামাল মাহমুদ, বাণিজ্যিক উপদেষ্টা কামরুল হক শামীম, বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান মাসুদুর রহমান ও সার্কুলেশন বিভাগের প্রধান বিল্লাল হোসেন মন্টু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক হাসনাইন খুরশিদ, রেডিও ক্যাপিটালের নির্বাহী পরিচালক মেহেদী মালেক সজীব, বাংলাদেশ প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক লুত্ফর রহমান হিমেল, প্রধান প্রতিবেদক মনজুরুল ইসলাম, নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান ও প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরি টেলর ও বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই সময় এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।

চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি আত্মপ্রচারে আগ্রহী নই। আমার কাজই আমার প্রচার। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠান দেশের মানুষের সেবা করার জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে। এজন্য এর প্রচারের প্রয়োজন আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ বছর ধরে সুদবিহীন ঋণ দিয়ে যাচ্ছি। কেউ মারা গেলে সেই ঋণও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে ৫০০ বেডের হাসপাতাল করেছি। সেখানে মাত্র ২০ টাকার টিকিট কিনে দরিদ্র মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে পারছেন। যেখানে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রাইভেট মেডিকেলে পড়তে লাগে সেখানে মাত্র ৪ লাখ টাকায় এই মেডিকেল কলেজে পড়তে পারছে শিক্ষার্থীরা। এটা সম্পূর্ণ অলাভজনক ও সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান।’

তিনি আরও বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ যেন বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সব নাগরিকেরই সুশিক্ষা জরুরি। আজ এই দুজন নারীকে সম্মানিত করা শুধু ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া বা বসুন্ধরা গ্রুপের নয়, দেশের জন্যও গর্বের। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার সাহায্যে দেশের জনগণের কাছে তাদের এই সেবার বার্তা পৌঁছে যাবে। সাংবাদিকরা দেশের বিবেক। মানবতার সেবা সবচেয়ে বড় ধর্ম। আমরা সবাই মানবিক গুণাবলিতে গুণান্বিত হব— সেই প্রত্যাশা করি।’

বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বলেন, ‘আমরা লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে কাজ করি। অসংখ্য মামলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঢিল মেরে রক্তাক্ত করেছে। আবার অনেক ভালো মানুষ ছিল যারা সবসময় বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই, কাটলে রক্ত একই। হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে বিদেশি দাতারা আর এ দেশে আসতে চায় না, আফ্রিকা চলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোয় আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরি টেলর বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। কেউ যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে একা আমরা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারি না। প্রতিষ্ঠানের আরও উন্নয়নে এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে আমরা আরও অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়াতে হবে, বাগান সম্প্রসারণ করতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনেক কাজ বাকি আছে। আপনাদের এ অনুদান দিয়ে অসহায় মানুষের সেবার মান বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করতে পারব।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আর্তমানবতার সেবায় বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যানের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। অসংখ্য অসুস্থ সাংবাদিক পরিবারকে সাহায্য করেছেন, সাগর-রুনির সন্তানের নামে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটা স্থায়ী ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছেন। একইভাবে মানবতার সেবায় পাশে দাঁড়িয়ে মনুষ্যত্বের প্রমাণ দিয়েছেন ভেলোরি টেলর ও অ্যাঞ্জেলা গোমেজ। তাদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘গণমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন সবসময়ই আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ কাজকে আরও এগিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের ত্রাণসহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বরাবরের মতো এবারও উত্তরাঞ্চলে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’

সর্বশেষ খবর