শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
জাকসু

অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি উদ্বোধনের বছরই অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (জাকসু)। এরপর ’৭৪, ’৭৯, ’৮০, ’৮১, ’৮৯, ’৯০, ’৯১ ও ’৯২ সালসহ মোট নয়বার নির্বাচন হয়। ’৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তত্কালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩ অনুযায়ী ১৯(১)-এর (ক) ও ১৯(২) ধারা মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি পর্ষদ সিনেটে জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধির বিষয়টি গত ২৫ বছর নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও অধিকারের যথাযথ প্রতিফলন ঘটছে না সিনেটে। তৈরি হচ্ছে না দক্ষ ছাত্র নেতৃত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কার কারণে তারা নির্বাচন দিতে পারছেন না। কিন্তু জাবির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেন, শিক্ষকরাই চান না জাকসু নির্বাচন হোক।

 

জবাবদিহির ভয়ে শিক্ষকরাই চান না নির্বাচন হোক

—জুয়েল রানা, সভাপতি, জাবি ছাত্রলীগ, জাবি

‘ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে নয়, একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবেও আমি চাই জাকসু হোক। ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতিতে সব দলের সহাবস্থান রয়েছে। প্রশাসন নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। নির্বাচনে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। কেননা জাবিতে নিয়মিতভাবেই অন্যসব নির্বাচন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিছু দিন আগেই শান্তিপূর্ণভাবে সিনেট নির্বাচন হলো। জাবিতে ছাত্র রাজনীতির কারণে কখনই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়নি। বরং শিক্ষক রাজনীতির কারণে কিছু দিন পর পর আন্দোলন তৈরি হয়। শিক্ষকরাই চান না জাকসু নির্বাচন হোক। কারণ জাকসু হলে শিক্ষকদের জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে।’

 

 

 

প্রশাসন আন্তরিক হলেই জাকসু নির্বাচন সম্ভব

—সোহেল রানা, সভাপতি, জাবি ছাত্রদল, জাবি

‘আমরা সবসময়ই জাকসু নির্বাচনের পক্ষে আছি। আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করি তারা সবাই ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করি। আর ছাত্রদের অধিকার আদায়ের একমাত্র উপায় হচ্ছে জাকসু। তবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনকে উদ্যোগী হয়ে রাজনৈতিক সহাবস্থান তৈরি করতে হবে। আমরা সবাই জাকসুর বিষয়ে একমত। সংঘাত-সংঘর্ষের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। প্রশাসন এসব বলে মিথ্যা জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ অবান্তর। প্রশাসন আন্তরিক হলেই জাকসু নির্বাচন সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘তাই দ্রুত নির্বাচনের সব পদক্ষেপ নিতে হবে। নেতৃত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত করতে এর আর কোনো বিকল্প নেই। আর সময়ক্ষেপন কাম্য নয়।’

 

 

 

 

 

 

সংঘর্ষের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে

—ইমরান নাদিম, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি

‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই জাকসুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে জাকসু প্রতিনিধি না থাকাটা অনিয়ম। জাবি দীর্ঘকাল ধরে এই অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে। শিক্ষকদের সদিচ্ছার অভাবেই নির্বাচন হচ্ছে না। ডাকসু নির্বাচন প্রদানে আদালত ঢাবি প্রশাসনকে বাধ্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য লজ্জার ব্যাপার যে, ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানের জন্য তাদের বাধ্য করতে হচ্ছে। আমরা চাই লজ্জার সম্মুখীন না হয়ে জাবি প্রশাসন অবিলম্বে নির্বাচন প্রদানে উদ্যোগী হবে। সংঘাত-সংঘর্ষের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে তারা নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে। আর সংঘর্ষ হলেও এগুলো এড়ানোর দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।’

সর্বশেষ খবর