শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
চাকসু

নির্বাচন না দিলে আন্দোলন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের রাজনীতিবিদ তৈরির সূতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদকে। ছাত্র সংসদ থেকেই উঠে এসেছেন দেশের জাঁদরেল সব নেতারা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচন হয় না ২৭ বছর।

 সবশেষ ১৯৯০ সালে চাকসুর নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন নাজিম উদ্দিন এবং জিএস নির্বাচিত হন আজিম উদ্দিন। বর্তমান ছাত্র নেতাদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে চাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। একই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান হয়েছে চবি ক্যাম্পাসে। দীর্ঘদিন পর ডাকসুর নির্বাচন নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রায় দেওয়ায় চাকসু নির্বাচন নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা ডাকসুর সঙ্গে সঙ্গে চাকসুর নির্বাচনও দাবি করেন।

 

নির্বাচন না হওয়ায় জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে না

—আলমগীর টিপু, সভাপতি, ছাত্রলীগ বিলুপ্ত কমিটি

দীর্ঘদিন ধরে চাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় চবি ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক উগ্র সংগঠনগুলোর ভয়াবহ উত্থান হয়েছে বলে মনে করেন চবি ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় প্রগতিশীল ও জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে না। যার ফলে ক্যাম্পাসে উগ্রবাদী সংগঠনগুলো এ সুযোগ ভালোভাবে ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে।’

চাকসুর নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকেই বড় বাধা মনে করেন এই ছাত্র নেতা। তার মতে, চবি প্রশাসনের সৎ ইচ্ছার অভাবেই চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। চবিতে ডিন, সিন্ডিকেট, সিনেট, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর নির্বাচন নিয়মিতই হয়। কিন্তু চাকসুর নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রশাসন বিমাতা সুলভ আচরণ করছে। নির্বাচন না দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাকসু নির্বাচন দিলে ছাত্রদের প্রতিনিধি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করবে। তখন প্রশাসন চাইলেই আর অযৌক্তিক কোনো সিদ্ধান্ত ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। এ ভয় থেকেই চাকসুর নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই ছাত্রলীগ চাকসুর নির্বাচন দেওয়ার জন্য দাবি করে আসছে। উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে আমাদের দাবি যৌক্তিক ছিল তা প্রমাণ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকসুর নির্বাচন দেওয়া না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।’

 

দেশ ক্রিয়েটিভ রাজনীতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

—খোরশেদ আলম, সভাপতি, ছাত্রদল. চবি

চাকসুর নির্বাচন না হওয়ার গুণগত নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না বলে মনে করেন চবি ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় চবি থেকে গুণগত নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। যার ফলে দেশ ক্রিয়েটিভ রাজনীতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সুস্থ ধারার রাজনীতির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।’ চাকসু নির্বাচন না দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে এ ছাত্র নেতা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের সৎ ইচ্ছার অভাব, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকা এবং চবি প্রশাসনের লেজুরভিত্তিক দলীয় রাজনীতির কারণে প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে না। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির প্রভাব তো রয়েছেই। প্রশাসনের সৎ ইচ্ছা থাকলে যে কোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।’ নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন ছাত্রদল সভাপতি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় চবি প্রশাসন যৌক্তিক ফি আদায় করছে। বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। চাকসুর কোনো প্রতিনিধি থাকলে একতরফাভাবে তা করতে পারত না প্রশাসন।’ এরই মধ্যে চাকসুর নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে ছাত্রদল— এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন মাস আগে থেকে ছাত্রদল চাকসুর নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না দিলে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

 

প্রশাসনের ইচ্ছার অভাবেই চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না

—প্রদীপ চাকমা সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, চবি

চাকসুর নির্বাচন না হওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন ধীষশন প্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, ‘চবি প্রশাসনের ইচ্ছার অভাবেই মূলত চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। প্রশাসন চাইলে যে কোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু ইচ্ছা মতো ফি আদায় করতে এবং সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেই তারা নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছে না।’

চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় উগ্রবাদীদের উত্থান হয়েছে চবিতে—এমনটাই মনে করেন প্রগতিশীল এই ছাত্র নেতা। তিনি বলেন, ‘চবিতে উগ্রপন্থির ভয়াবহ যে উত্থান হয়েছে তা মূলত চাকসু নির্বাচন না হওয়ার ফলে। সময়মতো যদি নির্বাচন হতো তাহলে সুস্থ ধারার ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা হতো। প্রগতিশীল নেতৃত্ব সৃষ্টি হতো। সব চেয়ে বড় কথা উগ্রবাদীদের উত্থান ঠেকানো যেত।’

দীর্ঘদিন করে চাকসুর নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্র ইউনিয়ন— এ কথা জানিয়ে ধীষশন প্রদীপ চাকমা বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন চাকসুর নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। আমরা অনেক স্মারকলিপি দিয়েছি চবি প্রশাসনের কাছে। মানববন্ধন ও মিছিল করেছি। এরপরও চবি প্রশাসন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা না করলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহৎ কর্মসূচি দেব।’

সর্বশেষ খবর