শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে সেদিন কী হয়েছিল, হচ্ছে তদন্ত

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে সেদিন কী হয়েছিল, হচ্ছে তদন্ত

হকার উচ্ছেদকালে দুই ডজন মামলার আসামি ও যুবদলের আহ্বায়ক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার ও বিএনপি নেতা সুলতান

নারায়ণগঞ্জে হকার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মিডিয়ায় উঠে আসা অস্ত্র তাক করা নিয়াজুল ইসলাম ইস্যুতে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে এসেছে। অস্ত্র তাক করার আগে নিয়াজুলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ পাওয়ায় নয়া মোড় নিয়েছে নিয়াজুল ইস্যু। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখছে। আইভীকে নয়, বরং নিয়াজুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশে আইভী সমর্থিতরা ঘটনার দিন তার ওপর হামলা চালিয়েছিল বলে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ও গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে আসা এক ভিডিওচিত্রে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভিডিওচিত্রে এটাও দেখা গেছে, আইভী সমর্থিত বিএনপি ক্যাডারদের হাত থেকে নিয়াজুল ইসলামকে রক্ষা করতে ছুটে এসেছিলেন মেয়র সমর্থক আবু সুফিয়ান। নিজের জীবন রক্ষায় নিয়াজুল সেদিন তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন এবং কোনো গুলিবর্ষণ করেননি বলেও স্পষ্ট দেখা গেছে সেই ভিডিওতে। ভিডিওতে এও দেখা গেছে, প্রথমে রাস্তার    পাশের ফুটপাথে, দ্বিতীয় দফায় রাস্তার মধ্যে ও তৃতীয় দফায় নিয়াজুল চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ওই হামলাটি করা হয়। এদিকে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যেভাবে দুই দফায় রাস্তায় ফেলে নিয়াজুলকে পেটানো হয়েছে সেটা ছিল নিছক হত্যার উদ্দেশে। শেষতক অস্ত্র তাক করে নিজের জীবন রক্ষা করেন নিয়াজুল। ভিডিওটি দেখলে তা বোঝা যাবে। নিয়াজুলের পরিবারের দাবি, তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার পরই তার ওপর হামলা করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, বিকাল ৪টা ৩৯ মিনিটে মেয়রের নেতৃত্বে লোকজন শহরের চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কের জীবন বীমা ভবনের মুক্তি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এলে একজন হকারের সঙ্গে তুমুল বাকবিতণ্ডা ঘটে। ওই হকারকে মারধরের পর পাশে থাকা মাসুদা প্লাজার নিচে থাকা নিয়াজুল ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে মারধর না করার অনুরোধ করেন। তখন আইভীর

বহরের সামনে থাকা লোকজন নিয়াজুলকে ধাক্কা দিতে থাকেন এবং বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান এসে নিয়াজুলকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন এবং চলে যেতে বলেন। কয়েক সেকেন্ড পর জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদিরও সেখানে এসে নিয়াজুলকে সরিয়ে দেন। কিন্তু তখন ওই বহরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের অতি-উত্সাহী লোকজন নিয়াজুলকে ধাক্কা মারতে মারতে সামনের দিকে ঠেলে দিতে থাকেন। সায়ামা প্লাজার সামনে ধাক্কাতে ধাক্কাতে আনার পর সেখানে ফুটপাথে পড়ে যান নিয়াজুল। তখন ৩০ থেকে ৪০ জন নিয়াজুলকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। বুকের ওপর ও গলায় চাপ দিয়ে ধরে একের পর এক মারধর করেন নিয়াজুলকে। এক পর্যায়ে তিনি কোনোমতে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চাষাঢ়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আবারও লোকজন গিয়ে দ্বিতীয় দফায় ফুটপাথে ফেলে মারধর করতে থাকেন। তখন নিয়াজুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে গেলে মারধরের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আশপাশের লোকজন কোনোমতে নিয়াজুলকে উদ্ধার করলে তিনি দ্রুত চাষাঢ়ার দিকে যেতে থাকলে তৃতীয় দফায় পেছন থেকে লাথি মারতে দেখা যায় কয়েকজনকে। ওই অবস্থায় পেছন থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে লোকজন এগোলে নিয়াজুল কোমর থেকে লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেন। এ অবস্থায় ৪ থেকে ৫ জন যুবক গিয়ে আবারও মারধর করে নিয়াজুলের পিস্তল ছিনিয়ে নেন। এদিকে গণমাধ্যমে শুধু নিয়াজুলের পিস্তল হাতে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। নিয়াজুল একসময় শামীম ওসমানের কর্মী ছিলেন এর রেশ ধরেই বিষয়টি শামীম ওসমানের ওপর বর্তানোর চেষ্টা করা হয়। মেয়র আইভীও সে সুযোগটি নিয়েছেন এবং শামীম ওসমানের নির্দেশে নিয়াজুল তাকে হত্যা করতে পিস্তল বের করেছিলেন বলে অভিযোগ করতে শুরু করেন। শুরুতে নিয়াজুলকে পেটানোর চিত্রটি উহ্য থাকে সর্বত্র। এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সেদিন কারা কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে ঘটনার সূত্রপাত করেছিলেন তারও তদন্ত হচ্ছে। এই ঘটনার পর সার্বিক সবকিছুর খবর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিয়াজুল নামের যে ব্যক্তি অস্ত্র বের করেছিলেন তার সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক কিছু তথ্য পেয়েছি। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তবে তিনি কী কারণে সেখানে গিয়েছিলেন সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও গণমাধ্যমে যাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের চিত্র বের হয়েছে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর