শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কী হচ্ছে উপকমিটি নিয়ে

বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে, বাস্তবে নেই

মাহমুদ আজহার

দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে চূড়ান্ত করা হয়— দলের কেন্দ্রীয় মূল কমিটির পাশাপাশি ২৫টি মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির আকারসহ সামগ্রিক দিক দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সামনে তুলে ধরা হয়। পরে তা দলের গঠনতন্ত্রেও যুক্ত করা হয়। কাউন্সিলের পর কয়েক দফায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলেও দৃশ্যমান নেই সেই উপকমিটির। কমিটি কে করছেন, কী প্রক্রিয়ায় করছেন তা অনেকেরই অজানা। এ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে  বিএনপির এক নেতা বলেছেন, এই কমিটি মূল কমিটির মতো নয়। এটা দৃশ্যমান হবে না। যারা বিএনপি কিংবা অঙ্গ-সংগঠনের রাজনীতি করে না এমন জাতীয়তাবাদী দক্ষদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে। তারা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নানা বিষয়ে গবেষণা করবেন। তাদের বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত থাকা জরুরি নয়। এই কমিটি গণমাধ্যমেও ঘোষণা হবে না।

জানা যায়, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে— অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, নারী ও শিশু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শিল্প ও বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিরক্ষা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, যুব উন্নয়ন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, শক্তি ও খনিজ সম্পদ, গবেষণা, মানবাধিকার, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষুদ্র ঋণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি বিষয়ক উপকমিটি প্রভৃতি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটি নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ কারণে অনেক বিষয়ে তার সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই কমিটিও  সময়মতো দেওয়া হবে।’

সূত্রমতে, সাম্প্রতিক সময়ে ১২টি কমিটির মধ্যে ৮টি কমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। সংশ্লিষ্টদের পূর্ণাঙ্গ উপকমিটি করার নির্দেশনাও দেন তিনি। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটিতে মানবাধিকার বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ধানের শীষের সম্পাদক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্তকে। এ ছাড়া তথ্য ও গবেষণা বিষয়ে মাহমুদা হাবিবাকে, পরিবেশ ও জলবায়ুতে ফরিদ উদ্দিনকে, খন্দকার আহাদকে স্থানীয় সরকার বিষয়ক আহ্বায়ক করা হয়েছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আনুষ্ঠানিক চিঠি চান। এরপর এ নিয়ে বিএনপিতে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া প্রচার প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগের এক নেতার নাম আসায় বিএনপির ভিতরে-বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনলাইনে লেখালেখিতে প্রলুব্ধ হয়ে তাকে ওই কমিটির প্রধান হিসেবে রাখা হয় বলে জানা গেছে। তবে ছাত্রলীগ নেতার অতীত জীবনবৃত্তান্ত সংশ্লিষ্টরা না জেনেই একটি কমিটির প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপকমিটির আহ্বায়ক পদ পাওয়া এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা লুকিয়ে কাজ করতে চাই না। আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিলে আমরা কীভাবে কাজ করব। তা ছাড়া আমাদের অনেকেরই সংসদীয় আসনে অবস্থা ভালো। দলে নিজের দায়িত্বটাও তুলে ধরলে এলাকায় তার ইতিবাচক প্রভাব পরে। তাই আনুষ্ঠানিক চিঠি থাকা জরুরি।

সূত্র জানায়, খাতওয়ারি বিষয় সম্পর্কে দল সমর্থিত অভিজ্ঞদের সঙ্গে প্রধান করে কমিটির খসড়াও করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১২টিরও বেশি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রমও চলছে। তবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে উপকমিটি গঠনের কাজ চলছে। কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়েও জানেন না ওই সব নেতা। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির সাংগঠনিক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সর্বশেষ খবর