শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্মজীবী মানুষের জীবনমান বদলে দিচ্ছে কেইপিজেড

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কর্মজীবী মানুষের জীবনমান বদলে দিচ্ছে কেইপিজেড

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ গ্রামের রুখসানা। বেশি দিন হয়নি বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। মাস শেষে বেতন পেতেন ২ হাজার টাকা। সেই তিনিই এখন কাজ করছেন কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (কেইপিজেড) একটি জুতার কারখানায়। মাসিক আয় প্রায় ২২ হাজার টাকা।

অতীতে টানাপড়েনের জীবন হলেও রুখসানা এখন স্বাবলম্বী। দৈনন্দিন খরচ করার পরও ব্যাংকে সঞ্চয় করছেন টাকা। রুখসানাদের এমন স্বাবলম্বিতায় বদলে গেছে এলাকার চিত্র। কেইপিজেড এলাকার আশপাশের আরও তিনটি উপজেলার ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন এই শিল্পাঞ্চলে। ফলে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। বদলে গেছে অভাব-অনটনের জীবন। দৈনিক খরচ নির্বাহ করে ব্যাংকে সঞ্চয়ও করছেন। পক্ষান্তরে তাদের ঘাম-শ্রমে অর্জিত নানা পণ্য রপ্তানি করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে রাজস্ব।

কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নে ১৯৯৯ সালে ২ হাজার ৪৯২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার কোরিয়া সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়। নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বৃহত্তম পরিবেশবান্ধব বেসরকারি এ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। বর্তমানে সেখানে ২৩ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২০ হাজারের অধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত। এখানে কাজ করছেন আনোয়ারা, কর্ণফুলী, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ। তা ছাড়া কেপিজেডের আশপাশের প্রতিটি গ্রামের ৫০ থেকে ১০০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন এসব কারখানায়। কেইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে স্থাপিত ফ্যাক্টরিগুলোয় কর্মরত প্রায় ২০ হাজার স্থানীয় শ্রমিকের আয়ের মাধ্যমে বার্ষিক প্রায় ২০০ কোটি টাকার নগদ সঞ্চালন হচ্ছে; যা এ অঞ্চলসহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।’ কেইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল ঘিরে পাল্টে গেছে এলাকার চেহারা। নারী কর্মসংস্থানে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রস্তুতকৃত জমিতে এখনই বিনিয়োগ আনা সম্ভব হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় চাতরী চৌমুহনি ও বন্দর সেন্টার এলাকায় সরকারি-বেসরকারি মোট ১০টি ব্যাংকের শাখা আছে। এসব ব্যাংক শাখায় শুধু কেইপিজেড কর্মীদের ২০ হাজার সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। আমানত পাওয়ার সুযোগ থাকায় ব্যাংকগুলোও এখানে নতুন নতুন শাখা স্থাপন করছে। এখানকার প্রথম কারখানা কর্ণফুলী শু ফ্যাক্টরি। সেখানে বর্তমানে কর্মরত প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজারই আশপাশ গ্রামের। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কারখানা তৈরি হলে কেইপিজেডে সরাসরি ১ লাখের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, মোট বরাদ্দপ্রাপ্ত জমির মধ্যে ২ হাজার ২৯২ একর জমির উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্তমতে, মোট জমির ৩৩ শতাংশ অংশে সবুজায়ন, ১৯ শতাংশে সবুজ মাঠ ও লেক তৈরি করে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে রাখা হয়েছে। ৪৮ শতাংশে (১ হাজার ১৯২ একর) বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ৯৯২ একর ভূমিতে শিল্প স্থাপনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩টি কারখানা ২৫ লাখ বর্গফুট আয়তনের ভবন নির্মাণ করেছে। নির্মাণ করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের থাকার জন্য একটি গেস্টহাউস। চলছে আরও একটি নির্মাণের কাজ। ১৬ কিলোমিটার লাইন বসিয়ে পুরো এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। কেইপিজেড এলাকায় নারী শ্রমিকদের আবাসনের জন্য নির্মাণ করা হবে ১২টি ডরমেটরি। এর মধ্যে ৩টির কাজ চলমান। কেইপিজেডের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখানকার সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে সাকল্যে ২০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। আর বিনিয়োগ আসবে প্রায় ১২০ কোটি ডলার। সেখান থেকে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর