বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

তাদের আচরণ দেখলে গাধার কথা মনে পড়ে

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাদের আচরণ দেখলে গাধার কথা মনে পড়ে

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একটি গাধার গল্প বলে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে গাধা বলছি না। তারা জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত। বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তবে তাদের আচরণগুলো যখন দেখি, খুব স্বাভাবিকভাবেই গাধার কথা মনে পড়ে।’ গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ফজিলাতুন নেসার সম্পূরক প্রশ্ন ছিল, ‘কিছু সুশীল ও পণ্ডিতজন সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক কোনো অগ্রগতি তারা দেখতে পারছেন না। উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পারছেন না।’ এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মত জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, সুশীলের ব্যাখ্যা কী, অর্থ কী, কোন তত্ত্বে তারা সুশীল—জানি না। তবে তাদের আকাঙ্ক্ষা ক্ষমতায় যাওয়ার। একটি পতাকা পাওয়ার। কিন্তু তারা আমাদের দেশের জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতি করতে হলে জনগণের ভোট পেতে হয়। ভোট পেয়ে এই সংসদে বসতে হয় ও সরকার গঠন করতে হয়। যদি আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করতে চাই। কিন্তু এই একটা শ্রেণি আমাদের আছে, তারা জনগণের কাছে যেতে চায় না। তারা ক্ষমতার বাঁকা পথ খোঁজেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ধরনের কিছু মানুষ ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পায়। এই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কিছু মানুষ খুঁজে নেয়। যারা সব সময় নিজেদের এসব অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজকে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, যেমন আমরা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে লেখা দেখি ‘ইউজ মি’। তারাও রাজনীতি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে বুকে ওরকম একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েই বসে থাকেন, ‘ইউজ মি’ মানে আমাকে ব্যবহার করুন। তারা সব সময় এরকম একটা আশায় বসে থাকেন। তাদের এই যে না দেখাটাও (উন্নয়ন) কিন্তু ওই ধরনের একটা অসুস্থতা। কারণ তাদের দৃষ্টিটা রয়ে গেছে ওই অবৈধ ক্ষমতার দিকে। এ সময় তিনি স্পিকারের দিকে তাকিয়ে বলেন, আমাকে একটু সময় দিলে একটি গল্প শোনাই। স্পিকার তাঁকে গল্প বলার অনুমতি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কাসের একটি সুন্দরী মেয়েকে বারবার দড়িতে ঝুলিয়ে খেলা দেখানোর চেষ্টা করা হলেও সে পারছিলেন না। তাই দেখে তার ইন্সট্রাকটর মেয়েটিকে সার্কাসের একটি গাধাকে দেখিয়ে বলল, এরপর যদি তুমি না পার, তাহলে ওই গাধার সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। এ কথা শুনে গাধা আশায় আশায় থাকে কখন দড়ি ছিঁড়ে ওই মেয়ে পড়ে যাবে, আর গাধা বিয়ে করবে। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, কিন্তু দড়িও ছিঁড়ে না আর গাধার স্বপ্নও পূরণ হয় না। আমাদের দেশের সুশীল সমাজের অবস্থা এরকম। এ সময় সংসদে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়। সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান। এরপর শেখ হাসিনা বলেন, তবে আমি তাদের গাধা বলছি না। কারণ তারা সবাই জ্ঞানী গুণী শিক্ষিত, বিদেশি ডিগ্রিধারী। তবে তাদের আচরণগুলো যখন দেখি, আর ওই যে কবে দড়ি ছিঁড়বে, কবে কপাল খুলবে ওই আশায় যারা বসে থাকেন স্বাভাবিকভাবে তখন তো একটু গাধার কথা মনে পড়েই। এ সময় আবার টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করেন সরকারি দলের এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের গতিধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিচ্ছে।

এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য  যে কিছু মানুষ এই উন্নয়নটা চোখে দেখে না। বাংলায় তো একটা গান আছে, ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’। যারা চোখ থাকিতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। তাদের তো হাজার বলেও দেখানোও যাবে না, শোনানোও যাবে না। যারা দেখতে পায় না, শোনতেই পায় না তাদের তো আমাদের বোঝানোর কিছু নেই।  সংসদ নেতা বলেন, আমার একটাই চিন্তা আমার বাংলাদেশের মানুষ কী পেল, তারা ভালো আছে কি না, তারা খুশি আছে কি না। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারছি কি না— এটাই আমাদের বিষয়। আমি জানি না এই সুশীলের ব্যাখ্যাটা কী, অর্থটা কী? কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা সুশীল— সেটা প্রশ্ন হয়েই দেখা দেয়, যখন তারা কোনো কিছু দেখেনও না শুনেনও না।

একজনকে তো হাল ধরতে হবে : জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন, আমি সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। তবে একটা কথা আছে। কবি বলেছেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল, একলা চলরে... একবার নয় বারবার বলেছেন, একলা চল, একলা চল, একলা চলরে। কারণ একজনকে তো হাল ধরতে হবে। সংসদ নেতা বলেন, গাড়ি একজনই চালায়। তবে সঠিকভাবে চালাতে হবে। নৌকা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একজন মাঝি লাগে। সেই মাঝি যদি সঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে চায় বা পারে তাহলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে। আর যদি সঠিকভাবে না চালাতে পারে তাহলে কিন্তু মাঝখানে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো আর কেউ এককভাবে করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, একজনকে তো উদ্যোগ নিয়ে, ভালো-মন্দ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েই চলতে হয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি সবাইকে নিয়েই চলতে। সবাইকে নিয়েই চলব। তবে এখানে একটা কথা আছে, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে। তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া যেন প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছায়। তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছায়— সেটাই আমরা চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আজকের এই অর্জন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি বলে সম্ভব হয়েছে। এ সময় সংসদ নেতা বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সংসদে বিরোধী দল গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছে, আলোচনা করছে। অন্তত বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন যে খিস্তি-খেউর ছিল, হতো, যেসব আলাপ-আলোচনা হতো, কান পেতে শোনা যেত না। এখন সেসব নেই। অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনা করছে বিরোধী দল। সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছ থেকে সর্বতভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি। উন্নয়নের ফসল গ্রামপর্যায়ে পাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেই সংবিধানে মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা বলা আছে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর