শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

গভীর উৎকণ্ঠা বিএনপিতে

জরুরি বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া, আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ আন্দোলন কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠের সমন্বয়, থাকছে দিকনির্দেশনা

মাহমুদ আজহার

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি কী হবে— এ নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরে গভীর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রায়ে দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হবে, না বেকসুর খালাস পাবেন— তা নিয়ে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের জিজ্ঞাসার শেষ নেই। উত্সুক দৃষ্টি সব মহলেরও। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে কিংবা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে হরতালসহ কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে মানসিকভাবে অনেক শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জেলকে তিনি ভয় পান না বলে ঘনিষ্ঠজনদের এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে থাকারও চিন্তাভাবনা চলছে। রায় নেতিবাচক হলে পরবর্তী কী করণীয় তা নিয়ে আজ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বেগম জিয়া। ওই বৈঠকেই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে হরতাল, অবস্থানসহ দীর্ঘমেয়াদি কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে বিশেষ আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে খালেদা জিয়ার তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন ‘সাজা’ হতে পারে বলে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বেকসুর খালাস পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। খালেদা জিয়া নিজেও আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে ‘সরাতে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছেন ক্ষমতাসীনরা। আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন কিনা— তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে সরানোর চক্রান্ত চলছে। কার্যত, সরকার জিয়া পরিবারকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চায়। তাই মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে। রায় কী হবে তা সরকার আগেই ঠিক করে রেখেছে। দেশে যে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার সুদূরপরাহত সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। বিচার হবে— প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই। এখন পর্যন্ত তার (এরশাদ) এ বক্তব্য যে আদালত অবমাননার শামিল, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’ বৃহস্পতিবার রায়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর রাতে গুলশানের বাসায় যান বিএনপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবীরা। তারা বেগম জিয়াকে সান্ত্বনার বাণীও শোনান। উচ্চ আদালতে এ মামলার রায় টিকবে না বলেও বেগম জিয়াকে আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়া কয়েকজন সিনিয়র নেতাও বেগম জিয়ার সঙ্গে বাসায় দেখা করে তাকে আশ্বস্তের চেষ্টা করেন। এ সময় বিএনপি-প্রধান সবাইকে অভয় দিয়ে বলেছেন, রায় কী হবে তা নিয়ে তিনি বিচলিত নন। দেশপ্রেমিক প্রকৃত রাজনীতিবিদরা জেল-জুলুমকে কখনই ভয় পান না। তবে রায়ের নেতিবাচক দিক বিবেচনায় নিয়ে বেগম জিয়া মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, রায়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর ঢাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা একাধিকবার বৈঠকে বসেন। অঙ্গসংগঠনের নেতারাও পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে তার প্রস্তুতি নিয়েও কথাবার্তা বলছেন শীর্ষ নেতারা। অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে নানা কৌশলও নিতে শুরু করেছেন। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিনভর কোনো নেতা-কর্মী দেখা যায়নি। কারও কারও ব্যক্তিগত ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে এই পরিস্থিতিতে অনেক নিষ্ক্রিয় নেতা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের দিনক্ষণ ঘোষণায় হতবাক হয়েছেন বিএনপির আইনজীবীরা। তাদের ধারণা ছিল, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা হবে। তা হতেও বেশ সময় লাগবে। এর মধ্যে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু হঠাৎই এ রায়ের দিনক্ষণ নির্ধারণকে ‘বিশেষ মহলের’ ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন তারা। আইনজীবীরা আরও বলেছেন, ন্যায়বিচার হলে এ রায়ে কিছুই হবে না। তবে যে প্রক্রিয়ায় মামলাটি চলছে, তাতে নেতিবাচকই হওয়ার সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়া সম্ভব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। এ মামলার রায়ে বেগম জিয়ার কিছুই হবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এ মামলাটি স্বাভাবিক গতিতে চলছে কিনা? আমি এখনো আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাবেন আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কোনো কারণে সাজা দেওয়া হলে বুঝতে হবে, স্বাভাবিক আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে আমরা উচ্চ আদালতে জামিন চাইব। আশা করি, জামিন পাব। সে ক্ষেত্রে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে না।’ এদিকে রায়ের নেতিবাচক দিক ধরে নিয়েই সারা দেশে নেতা-কর্মীদের কাছে ‘বিশেষ বার্তা’ পাঠানো হয়েছে। দলের হাইকমান্ড থেকে এ বার্তা পাঠানো হয়। তা ছাড়া সিনিয়র নেতাদের জেলা সফরেও এ বিষয়ে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে তত্ক্ষণাৎ বিক্ষোভ মিছিল করার কথা বলা হয়েছে। এরপর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বার্তা জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারে না। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ অবশ্যই দেশবাসী করবে। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচিই সর্বস্তরের মানুষ বাস্তবায়ন করবে।’ একই কথা বলেন বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান। তিনি জানান, ‘রায় নেতিবাচক কিছু হলে হাইকমান্ড যে কর্মসূচি দেবে তা আমরা বাস্তবায়ন করব। গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে গেলে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী কিংবা কোনো সমর্থক ঘরে বসে থাকতে পারেন না। সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন, খালেদা জিয়া ছাড়া আগামীতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর