শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার মডেলেই ছাত্রলীগের আগামী কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মাধ্যমেই দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ভিতরে গণতান্ত্রিক চর্চার যে রোল মডেলের (সরাসরি ভোট) শুভসূচনা করেছেন সেই মডেলেই এবার নির্বাচিত করা হবে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশের প্রথম ধাপ ধরা হয় ছাত্রলীগকে। সে কারণে রাজনীতির শুরুতেই যেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্র চর্চায় অভ্যস্ত হতে পারেন, এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে তিনি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের মতো প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পক্ষে নন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তবে শেখ হাসিনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই নয়, ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা নির্বাচনেও ভোট হওয়া প্রয়োজন। তারা এ জন্য ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনীর পরামর্শও দিয়েছেন। সূত্রমতে, ছাত্রলীগকে গণতান্ত্রিক চর্চায় উজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০২ সালে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসেন। সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়। রাজপথে ছাত্রলীগকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সম্মেলনের উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা। ওই বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সে সময় কারান্তরীণ দুই ছাত্রনেতা লিয়াকত সিকদার ও নজরুল ইসলাম বাবু। লিয়াকত-বাবুর পর ২০০৬, ২০১১ ও ২০১৫ সালে প্রতিটি সম্মেলনেই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে ছাত্রলীগের  নতুন নেতা।  ২০০৬ সালে মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ২০১১ সালে এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলম এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইন যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সরাসরি ভোটে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের যে রোল মডেল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে সংগঠনে গণতান্ত্রিক চর্চার ধারাবাহিকতা থাকবে, সেই সংগঠন তত বেশি গতিশীল হবে। ছাত্র সংগঠনের আজকের নেতারাই হবে দেশের ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতা। সুতরাং গণতান্ত্রিক চর্চা অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু অন্য পদগুলোতে নির্বাচন না হওয়ায় পরবর্তীকালে নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাসায় গিয়ে পদপদবি প্রত্যাশীরা ভিড় জমায়। কে কার লোক হবে-এ নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে ওই দিন থেকে বিভক্ত হতে থাকে ছাত্রলীগের দুই ধারা। সম্মেলনের দিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বা দু-একদিনের মধ্যে গঠন করা হলে এই ধারা বন্ধ হতো।  ড. মীজানুর রহমান গঠনতন্ত্র সংশোধনের তাগিদ দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হবে। যিনি একবার সাধারণ সম্পাদক হবেন-তিনি যেন পরবর্তীতে সভাপতি না হতে পারেন। কারণ জেলা-উপজেলায় দেখা গেছে, যিনি সাধারণ সম্পাদক হন, তিনি পরবর্তীতে সভাপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হন। সভাপতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। কাজেই যিনি সাধারণ সম্পাদক একবার হবেন তিনি যেন সভাপতি হতে না পারেন সে জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো সংগঠনের পদপদবি-নেতৃত্ব নির্বাচিত করার বিষয়টি দুটি ভাগে হতে পারে। প্রথমে আলোচনার ভিতর দিয়ে সবার মতৈক্যে পৌঁছানো। তা না হলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন। ছাত্রলীগ বড় একটি সংগঠন, বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। আন্দোলন, সংগ্রাম, উন্নয়ন ও অর্জন যে সংগঠনের সেটা হচ্ছে ছাত্রলীগ। সে কারণে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত করা প্রয়োজন। কারণ যারা এখন ছাত্র তারা যেন চেতনা নিয়ে গড়ে ওঠে। তাদের ধরে নিতে হবে, আচার-আচরণ ও আদর্শের জায়গা যেন শক্ত হয়। তারা আসলে কোন রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সেটা যেন পরিষ্কার হয়। তিনি বলেন, চেতনার জায়গা ছাড়া গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হতে পারে না। যারা নেতা হতে চান, তারা ভাববেন আমাকে যদি আমার দল গ্রহণ না করে, নেতার জোরে, দাদা-দিদির জোরে নেতা পদবি পাই, সেটা ছাত্রদের জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য কোনোটাই সুখকর হবে না।

সর্বশেষ খবর