বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

হার্ড লাইনে সরকার

রফিকুল ইসলাম রনি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগেই হঠাৎ মারমুখী বিএনপিকে প্রতিহত করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। সহিংসতা বন্ধসহ সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে সরকার জিরো টলারেন্সে থাকবে। তালিকা অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করবে। পুরনো মামলা সচলসহ সহিংসতা করলেই আন্দোলনকারী ও হুকুমদাতাদের গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় থেকে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলারও সিদ্ধান্ত আছে আওয়ামী লীগের। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সরকার ও আওয়ামী লীগের এ অবস্থান থাকবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজপথ নিজেদের দখলে রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতি সারতে চায় সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হবে। এ মামলায় সাজা হওয়ার মতো সব রকম প্রমাণাদি আছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা তাদের অবহিত করেছেন। সাজা হলে বিএনপি আন্দোলনের মরণ কামড় দেবে। গত মঙ্গলবার হাই কোর্টের সামনে দলটি সেই শক্তি দেখিয়েছে। পুলিশের গাড়ি ভেঙে আটককৃতদের ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ আদালত এলাকাসহ শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, মত্স্য ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি সেদিন রাজপথ দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, সন্ত্রাস নৈরাজ্য কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যারাই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা অবস্থা বজায় রাখতে যা যা করণীয় তা-ই করা হবে। গতকাল মহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উসকানি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা কোনো উসকানি দেব না, কিন্তু আক্রমণ হলে সমুচিত জবাব দেব। সে জন্য প্রস্তুত হোন, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন।’  সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনকে মাথায় রেখে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতাদের মামলাগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেসব মামলার ভিত্তি কতটা শক্তিশালী তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যখনই বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামবে তখনই সরকার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি নতুন মামলায়ও গ্রেফতার করা হবে সামনের সারির নেতাদের। ইতিমধ্যে পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত ধরপাকড় আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যেসব এলাকায় বিএনপি-জামায়াত তাণ্ডব চালাতে পারে সে এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেসব নেতাকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি মনে করা হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সরকারে আছি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারাই আইন ভঙ্গ করবে তাদেরই শাস্তি পেতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর