বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হট্টগোল

এজলাস ছেড়ে গেলেন বিচারক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী সফর নিয়ে কথা বলায় আদালতে তুমুল হট্টগোল ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের এই বাকবিতণ্ডা ও হৈচৈয়ের কারণে একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান বিচারক। ১৫ মিনিট পর আবারও ফিরে এসে আইনজীবীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। যুক্তিতর্কের শুরুতেই আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এক দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট চাইলেন, আরেক নেত্রী কোর্টের কাঠগড়ায়। তার এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এজলাস থেকে উঠে যান। ফলে কিছুক্ষণের জন্য আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ছিল। গতকাল রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ আদালতে এ ঘটনা ঘটে। আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলামের প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর নিয়ে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানান। আসামির আইনজীবী আমিনুল বলেন, এটি একটি উদাহরণ। তখন দুদকের পিপি বলেন, এটি বলা যাবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কথা রেফারেন্স দেওয়া যাবে না। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু করলে আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষণ ধরে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকলে বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান। প্রায় ১৫ মিনিট বিচারকাজ বন্ধ থাকার পর আবার শুনানি শুরু হয়। এ সময় জুনিয়র আইনজীবীদের ‘সাইড টক’ বন্ধ করতে বলেন বিচারক। তিনি আরও বলেন, এখানে উপস্থিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি হয় এমন কাজ করবেন না। বিচারক আরও বলেন, আরও যে বড় দলের একজন নেত্রী তার কথা আমরাও বিবেচনা করে কথা বলি। আপনারা জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে এমন কিছু করবেন না। পিপি ও আসামির আইনজীবীদের মধ্যে যে বিতর্ক তা বিচারকাজের সৌন্দর্য। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার এই বিশেষ আদালতে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার আগেই আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। তার বক্তব্যের মধ্যেই বক্তব্য দিতে শুরু করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা বাকবিতণ্ডায় জড়ালে বেলা ১১টা ৫৪ মিনিটের দিকে বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজামান এজলাস ছেড়ে চলে যান। ১৫ মিনিট পরে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ফের এজলাসে ফিরে আসেন তিনি। তখন আদালত জুনিয়র আইনজীবীদের কথা না বলার জন্য পরামর্শ দেন এবং সিনিয়র আইনজীবীকে কথা বলার জন্য আদেশ দেন। এরপর আবার শুনানি শুরু হয়। অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের পিপি বলেছেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতে পারেন না। অথচ গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে গিয়ে সেখানকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বক্তব্য দিয়েছেন। তা তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে করেছেন, নাকি ব্যক্তিগত কাজ এটা? এ সময় দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজল এর প্রতিবাদ শুরু করেন। এর মধ্যে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা এগিয়ে এসে পরস্পরের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। মামলায় আসামি পক্ষের পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছে আদালত।

খালেদা জিয়া ছাড়াও ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন— খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

হাই কোর্টের সামনে থেকে ২০ বিএনপি কর্মী আটক : হাই কোর্ট মাজার গেটের সামনে থেকে বিএনপির ২০ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে এগিয়ে দিয়ে নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই হাই কোর্টের ভিতরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পুলিশ ২০ জনকে আটক করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর