বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন আইজিকে বরণ করল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন আইজিকে বরণ করল পুলিশ

ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী

নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে বরণ করে নিল পুলিশ। গতকাল পুলিশ সদর দফতরে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিদায়ী আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে দেওয়া হয় বিদায়ী সংবর্ধনা। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশ বাহিনীর রেওয়াজ অনুযায়ী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ কে এম শহীদুল হককে গাড়িতে বসিয়ে ঘোড়-সওয়ারিসহ দড়ি টেনে পুলিশ সদর দফতর থেকে বিদায় দেন। এর আগে পুলিশ সদর দফতর থেকে শেষবারের মতো গার্ড অব অনার দেওয়া হয় তাকে। অনুষ্ঠান শেষে বিদায় নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিদায়ী আইজিপি বলেন, এটা নির্বাচনের বছর। অনেক ষড়যন্ত্র হবে। ধৈর্যের সঙ্গে সেসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে হবে পুলিশকে, যাতে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। গতকাল হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের ওপর বিএনপি কর্মীদের হামলার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, সে রকম ঘটনা সামনে আরও ঘটতে পারে। তাই যে কোনো উসকানিতে পুলিশকে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে। পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে তিনি পুলিশ বাহিনীকে ২০টি নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান। মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদায় সংবর্ধনায় শহীদুল হক বলেন, ‘দায়িত্বকালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র ও বাধা এসেছিল, সেগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। যত দিন বেঁচে থাকব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই বেঁচে থাকব।’ বিদায়ী আইজিপি বলেন, ‘২০১৩ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে যে আগুনসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য হয়েছিল, সেই অবস্থাও আমরা উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। দেশে যাতে কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার আসতে না পারে সে জন্য দায়িত্বের পুরো তিন বছর এক মাস কাজ করেছি।’ ২০১৮ সালকে নির্বাচনের বছর উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, ‘অনেকেই বলে এটা নির্বাচনের বছর। অনেক চ্যালেঞ্জ। সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নতুন আইজিপিকে সহযোগিতা করতে হবে।’ কর্মজীবন থেকে পূর্ণ সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করে বিদায়ী আইজিপি বলেন, ‘আমার মধ্যে কোনো হতাশা নেই। সবার কাছ থেকেই সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।’ বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগুনসন্ত্রাস ও জামায়াত-শিবির চক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নবনিযুক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এস এম মনিরুজ্জামান, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি শোয়েব রিয়াজ আলম, টাঙ্গাইল পিটিসির অতিরিক্ত ডিআইজি সালেহ মো. তানভির, গাজীপুর জেলার এসপি হারুন অর রশিদ, মুন্সিগঞ্জ জেলার এসপি জায়েদুল আলম, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, এএসপি সাদিয়া আফরিন, পরিদর্শক ফরহাদ হায়দার, উপ-পরিদর্শক রাসেল আহমেদ, প্রধান সহকারী আলী হোসেন ও কনস্টেবল কেয়া খাতুন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। নতুন আইজিপি তার বক্তব্যে বলেন, ‘২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধশক্তির বিরুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত পুলিশ কখনো পরাজিত হয় না। কোনো চ্যালেঞ্জই আমাদের কাছে নতুন বিষয় নয়। কারণ পুলিশের চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আমাদের প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে।’ জঙ্গিবাদ দমনে সফলতার বিষয়টি টেনে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সফলতা গোটা পৃথিবীর কাছে একটি অবাক বিস্ময়। সবাই জানতে চায়, কীভাবে আমরা তা মোকাবেলা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ২০২১ ও ২০৪১ সালের ভিশন ছুঁতে চাইলে পুলিশের বর্তমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।’ পুলিশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে নতুন আইজিপি বলেন, ‘সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ স্যারের আমলে পুলিশে আধুনিকায়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জনাব হাসান মাহমুদ খন্দকার ও বর্তমান আইজিপি জনাব শহীদুল হক তা অব্যাহত রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় পুলিশের জন্য বাজেট ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পুলিশের জন্য কল্যাণময়ী কাজ, মঙ্গলময়, ভালো কাজ যা বর্তমান আইজিপি করার চেষ্টা করেছেন, সেসব কাজকে ত্বরান্বিত করে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’

সর্বশেষ খবর