শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

চূড়ান্ত গাইডলাইন দেবেন খালেদা

শঙ্কার মধ্যেও ছয় বছর পর আজ নির্বাহী কমিটির সভা

মাহমুদ আজহার

দুই বছর পর চরম সংকট মুহূর্তে আজ দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি-প্রধানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় দোরগোড়ায়। রায়ে নেতিবাচক কিছু হতে পারে এমনটি ধরে নিয়েই এগোচ্ছে দলটি। তাই রায়-পরবর্তী করণীয় কী হবে সে বিষয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত নিতেই কার্যত এই সভা। রায়ে ‘সাজা’ হলে দলের করণীয় কী হবে তা নিয়েই চূড়ান্ত গাইডলাইন দেবেন বিএনপি-প্রধান। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ হলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাও আসতে পারে। বিশেষ করে বেগম জিয়া জেলে গেলে দলের নেতৃত্ব কীভাবে চলবে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসবে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি জানায়, আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর খিলক্ষেতে পাঁচতারা হোটেল ‘লা মেরিডিয়ানে’র গ্র্যান্ড বলরুমে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা বসবে। নির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন বেগম খালেদা জিয়া, যিনি টানা ৩৩ বছর দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও দুপুরের খাবারের বিরতির পর দ্বিতীয় অধিবেশন হবে রুদ্ধদ্বার। সেখানে শুধু নির্বাহী কমিটির সদস্যরাই অংশ নেবেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি; একাদশ সংসদ নির্বাচন; সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রভৃতি বিষয় ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী সভা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। একই ভাবে বিএনপির লাইভ ডট কমও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রচার করবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা হয়। ওই সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্তও হয়েছিল। পরে তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন মাস পর নির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আজ কমিটির প্রথম বৈঠক হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও দেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদাধিকারবলে এ সভায় অংশ নেবেন। একই সঙ্গে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদাধিকারবলে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নেতাকে নিয়ে আজ বৈঠকে বসছেন বেগম জিয়া। এরই মধ্যে নেতাদের অধিকাংশের হাতেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে যারা পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারেননি তারা অনুষ্ঠানস্থল থেকেই কার্ড সংগ্রহ করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাহী কমিটির বৈঠক থেকেই দেশবাসীর উদ্দেশে “গুরুত্বপূর্ণ” বার্তা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। নির্বাচনের এই বছরে চলমান রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমাদের দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ সভায় দেশের চলমান রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কী করণীয় সে সম্পর্কে তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামত শুনবেন চেয়ারপারসন।’ একই কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে আমরা সভা করতে পারিনি। তবে দেরিতে হলেও এক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে এ সভা হতে যাচ্ছে। এটা কোনো সংকট সামনে রেখে নয়, গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এ সভা হচ্ছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক কথাবার্তাও হবে।’ বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাহী কমিটির সভায় ৮ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই তৃণমূল নেতাদের মতামত নেওয়া হবে। কেউ যেন নিজের চাওয়া-পাওয়া বা বঞ্চনায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের বক্তব্য না দেন সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। দীর্ঘ দুই বছরে সভা না হওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদগারের সুযোগও দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগও কম বলে জানা গেছে। জানা যায়, ওয়ান-ইলেভেনে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগমুহূর্তে দলের নেতৃত্বে বেশকিছু পরিবর্তন আনেন। তা ছাড়া ওই সময় দল কীভাবে চলবে তা নিয়ে গুটিকয় নেতাকে দিকনির্দেশনা দেন। এ নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সমালোচনায় ফেটে পড়েন। তাদের দাবি ছিল, খালেদা জিয়ার বার্তা কেউ সঠিকভাবে তৃণমূলে পৌঁছাননি। বিষয়টি পরে বেগম জিয়াকেও জানানো হয়। তাই এবার আগে থেকেই দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ‘চূড়ান্ত গাইডলাইন’ দিয়ে যেতে চান বেগম জিয়া। এরই অংশ হিসেবে আজ নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সূত্রমতে, নির্বাহী কমিটির সভায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির যাওয়া-না যাওয়া নিয়েও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। বিশেষ করে বেগম জিয়া জেলে গেলে পরবর্তীতে কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে যাওয়া যায় সে ব্যাপারেও খোলামেলা আলোচনা হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বিএনপি। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য নিয়ে আন্দোলনের পথ খোলা রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে দলের হাইকমান্ড। তবে কোনো কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলেও ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা যেন সফল না হয় সেজন্য সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। নেতাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পরিচয়পত্রও সংগ্রহ করতে দিচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরও আমরা সভার সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। শোকপ্রস্তাবও তৈরি হয়ে গেছে। বৈঠকের অনুষ্ঠানস্থলের অঙ্গসজ্জা কাজও শেষ পর্যায়ে। ৫০২ সদস্যের বাইরে বৈঠকে জেলা ও মহানগর সভাপতি পদাধিকারবলে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এ ছাড়া দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যরাও এ সভায় আমন্ত্রিত।’

খালেদা জিয়ার ভাষণ ফেসবুকে লাইভ : জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্বোধনী ভাষণ ফেসবুকে লাইভ হবে। আজ বেলা ১১টার দিকে এ ভাষণ লাইভ হতে পারে। এর আগে সকাল ১০টায় বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান। ফেসবুকের তিনটি পেজ থেকে এ ভাষণ দেখা যাবে। এগুলো হলো : Facebook.com/bnp.communication, Facebook.com/bnpbd.org& I Facebook.com/bnplivenettv.

সর্বশেষ খবর