শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের ‘না’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রাখাইনে গিয়ে সরেজমিন দেখতে প্রতিনিধি পাঠানোর প্রস্তুতির মধ্যেই এখন সফরে না যেতে বলেছে মিয়ানমারের সরকার। নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিনিধি পাঠানোর কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সফরে ‘না যাওয়া’র জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে মিয়ানমার। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা দেশ কাতারের জাতিসংঘে প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মনসুর আয়াদ আল ওতাইবি এ তথ্য জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেনি মিয়ানমার। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এখন সফরের সঠিক সময় নয়’।

রাষ্ট্রদূত মনসুর আয়াদ আল ওতাইবি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে কুয়েতের সভাপতিত্ব থাকাকালীন সময়ে সফর আয়োজনের চেষ্টা চলছিল। কিন্তু মিয়ানমার অসম্মতি জানানোয় তা হলো না। তবে মিয়ানমার সরকার যেহেতু প্রস্তাবটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেনি এবং তারা যেহেতু বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারি সঠিক সময় নয়’— সেহেতু পরবর্তীতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফর আয়োজন করতে পারে। সেটা মার্চ এবং এপ্রিলসহ ভিন্ন সময়েও হতে পারে। রাষ্ট্রদূত ওতাইবি বলেন, মিয়ানমার জানিয়েছে রাখাইনের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়, বরং সেখানে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে থাকা কূটনৈতিক কর্পের সদস্যদের একটি সফর আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে। এসব কারণ দেখিয়ে এখন রাখাইনে সফরে যাওয়ার সঠিক সময় নয় বলেছে মিয়ানমার। গত নভেম্বরে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

কক্সবাজারে ক্যাম্পে জাতিসংঘের দূত : রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সফর করছেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছা দূত ও জাপানি সংগীত শিল্পী মিয়াবি ইশিহারা তাকামাসা। আজ শনিবার পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। ইউএনএইচসিআর জানায়, বাংলাদেশে মিয়াবির এটিই প্রথম সফর। এ সফরে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের গান শোনানোরও পরিকল্পনা আছে তার। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের অংশীদারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। মিয়াবি গত নভেম্বর মাসে ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ পান। মিয়াবি বলেছেন, তার জন্য ইউএনএইচসিআরের চলমান জরুরি কার্যক্রম দেখা এবং চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানার এটিই প্রথম সুযোগ।  রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের জরুরি তৎপরতাবিষয়ক প্রধান কেভিন অ্যালেন বলেন, মিয়াবিকে স্বাগত জানাতে পেরে তারা আনন্দিত।

জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ : মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) অনুসন্ধানে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর এ উদ্বেগ জানানো হলো। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থিনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক বলেন, রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশের অনুমতি নেই। কিন্তু আমরা মিয়ানমার সরকারের অনুমতি চাই। খবর যাচাইয়ের জন্য আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণকবরের সন্ধানের খবরে জাতিসংঘের মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মানবাধিকার হরণ ও লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সহযোগিতাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় একটি তদন্তের মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা সম্ভব। বিশ্বের জানা উচিত আসলে সেখানে (রাখাইন) কী ঘটেছে। সূত্র : এপি।

প্রসঙ্গত, এপির অনুসন্ধানে মিয়ানমারে নতুন পাঁচটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। রাখাইনের গু দার পাইনের একই এলাকার ওই পাঁচ গণকবরে চার শতাধিক মানুষের মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৪ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নতুন গণকবরের সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এপি। নিপীড়নের অভিযোগকারীদের কেউ কেউ নিজেদের দাবির পক্ষে সময়-চিহ্নিত ভিডিও সরবরাহ করেছেন। পরে নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে গিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও প্রবেশাধিকার না থাকায় ব্যর্থ হয় এপি।

সর্বশেষ খবর