রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে মাঠে মন্ত্রী-এমপিরা

গোলাম রাব্বানী

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে মাঠে নেমেছেন মন্ত্রী-এমপিরা। ইতিমধ্যে অনেক মন্ত্রী-এমপি নিজ নিজ আসনের সীমানা-সংক্রান্ত সমস্যা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছেন। অনেক সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেও সীমানা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসনের সীমানা নিয়ে মহা টেনশনে আছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা। তারা কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে সীমানা পরিবর্তনের জন্য ইসির কাছে শত শত আবেদন করিয়েছেন। এ ছাড়া ইসির কাছে সীমানা-সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ শত শত সাধারণ মানুষ। এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি করার সময় দেওয়া হবে। যদিও একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসনসীমানা পুনর্বিন্যাস করে এখনো খসড়া প্রকাশ না হলেও বিদ্যমান সীমানা বহাল কিংবা পরিবর্তন চেয়ে শত শত আবেদন জমা পড়ছে নির্বাচন কমিশনে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ৬৪ জেলার অধিকাংশ আসন নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ‘সাধারণ নাগরিক’রাও আছেন আবেদনকারীর তালিকায়। একই আসনের ছোট একটা ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়ন বা উপজেলাকে অন্য আসনে নেওয়ার দাবি যেমন এসেছে, তেমনি এখন আসনসীমানা যেভাবে আছে তা বহাল রাখার আবেদনও করেছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের এমপি মুন্নুজান সুফিয়ান খুলনার দুটি ইউনিয়নকে খুলনা-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন। ২০১৩ সালে পিরোজপুর জেলার আসনসীমানা ‘সঠিক না হওয়ার’ অভিযোগ জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্না তা পুনর্বিন্যাসের আবেদন জানিয়েছেন।

সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মণি বরগুনা-২ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস চেয়েছেন। আর সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মল্লিক বরগুনা-৩ আসনের বর্তমান সীমানা অটুট রাখার দাবি জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ক্ষেত্রেও বর্তমান সীমানা বহাল চেয়েছেন সাবেক এমপি গোলাম হাবিব। এদিকে এমপি তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-১০ আসনে পরিবর্তন এনে কুমিল্লা-৯ আসন আগের সীমানায় চান। তিনি আবেদনে বলেছেন, নবগঠিত লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নকে কুমিল্লা-১০-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা আগের মতো নির্ধারণ করা হোক। এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা-৬ আসনে পরিবর্তন চান। এমপি নুরুল ইসলাম মিলন কুমিল্লা-৮ আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চান। কুমিল্লা-৯ আসন আগের সীমানায় ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। নাঙ্গলকোট উপজেলা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে দুটি আসন চেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার। তিনি আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ অনুসারে আগের মতো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে পৃথক দুটি আসন ঘোষণার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। ‘সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত কমিটি’ আগামী নির্বাচনের জন্য আসনসীমানার খসড়া তৈরির কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এর আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই আবেদন করেছেন। আপাতত আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে পুনর্বিন্যস্ত আসনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা।’ ফলে হাতে থাকা আবেদনগুলো এখনই বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, খসড়া প্রকাশের পর দাবি বা আপত্তি জানানোর জন্য সময় দেওয়া হবে। তখন প্রতিটি আবেদনই বিবেচনায় নিয়ে নিষ্পত্তি করার সুযোগ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই সীমানা নিয়ে আবেদন জমা পড়ছে। কেউ ডাকে পাঠাচ্ছেন, কেউ আবার নিজে হাতে দিয়ে যাচ্ছেন। সেসব আবেদন জেলাভিত্তিক ফাইল করে রাখছেন ইসি কর্মকর্তারা। এর মধ্যে নরসিংদী জেলায় সীমানা নিয়ে ১০৫টি আবেদন এসেছে। এ ছাড়া পিরোজপুর জেলায় ৫৬; গাজীপুর, কুমিল্লা ও বরিশালে ১৪ থেকে ১৬ এবং ঢাকা-১১, ১৮; নারায়ণগঞ্জ-৪; নরসিংদী-৫; গাজীপুর-২, ৩, ৫; পাবনা-১; খুলনা-৩, ৬; বরিশাল-২, ৩; পিরোজপুর-১, ২, ৩; বরগুনা-২, ৩; ভোলা-২; পটুয়াখালী-৩; শেরপুর-৩; কিশোরগঞ্জ-১; কুড়িগ্রাম-৩, ৪; কুমিল্লা-১, ২, ৬, ৮, ৯ ও ১০ আসন নিয়েও আবেদন পড়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘বিদ্যমান অধ্যাদেশের আলোকে ৩০০ আসন পর্যালোচনা করেই কাজ করছি। কুমিল্লার একটি সংদীয় আসন নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, কমিশন আপিলও করেছে। এটি নিষ্পত্তি হলেই খসড়াও দ্রুত প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’ জনসংখ্যার ভারসাম্য, প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার কথা বিবেচনায় নিয়েই এসব সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজটি করা হবে বলে জানান তারা।

এ বছর ৩০ অক্টোবর থেকে আগামী বছর ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অন্তত ছয় মাস আগেই সংসদীয় আসনের সীমানার গেজেট প্রকাশ করতে হয়। ফেব্রুয়ারির মধ্যে খসড়া করা গেলে মার্চে দাবি-আপত্তি ও এপ্রিলে শুনানি শেষ করা যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এর আগে বলেছিলেন, ‘সংসদীয় সীমানা-সংক্রান্ত কমিটি সার্বিক বিষয় গুছিয়ে রাখতে কাজ করছে। কমিশন সভায় উপস্থাপিত হলে এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুনর্বিন্যস্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা আমাদের।’

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০ আসনে পরিবর্তন আনা হয়। সেবার ৮৭টি আসনে পরিবর্তন এনে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। মার্চে দাবি-আপত্তির সময় রাখা হয়। ২৩ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বিভাগীয় শুনানি চলে। ৮৯৪টি দাবি-আপত্তির আবেদন জমা পড়ে। ৩ জুলাই ৩০০ আসনের যে গেজেট প্রকাশ করা হয়, তাতে ২৫০ আসনের সীমানা বহাল রেখে ৫০ আসনে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে নবম সংসদে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দাবি-আপত্তি জমা পড়েছিল।

সর্বশেষ খবর