রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশীয় জনবলে চলবে বিদেশে বাংলাদেশি মিশন

চিঠিতে মুহিতকে তোফায়েল

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় কমানো— এ তিন কারণে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোর সহায়ক পদে দেশীয় জনবল নিয়োগের অনুমোদন চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দেশের ৬টি শহরে বাংলাদেশের মিশনে দেশি লোক নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সম্প্রতি চিঠি লিখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। চিঠি পাওয়ার পর আবুল মাল আবদুল মুহিত নোটে লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে আমি অন্য ধরনের একটি প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি। সেখানে অগ্রগতি দেখে উদ্যোগ নেওয়া যাবে।’ যে ৬টি মিশনে দেশীয় লোক নিয়োগের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : বার্লিন, টোকিও, প্যারিস, তেহরান, মাদ্রিদ ও ব্রাসেলস। সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের সভাপতিত্বে এক সভায় বাংলাদেশি মিশনগুলোয় স্বদেশি লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের বাণিজ্যিক উইংগুলোর জন্য ১৯টি স্বদেশভিত্তিক পদের বিপরীতে অর্থ বিভাগ ১৩টি মিশনে দেশীয় এবং ৬টি মিশনে বিদেশি (স্থানীয়ভিত্তিক) জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেয়। অর্থ বিভাগের অনুমোদন না পাওয়ার ফলে ওই ৬টি মিশনে লোকবল নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এখন স্থগিত হওয়া ওই ৬টি মিশনে দেশীয় লোকবল নিয়োগের অনুমোদন চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে তোফায়েল আহমেদ স্বদেশি জনবল নিয়োগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান বিশ্বে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যব্যবস্থায় রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ, বহুমুখীকরণ এবং ডব্লিউটিওর আওতায় বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশে রপ্তানি বাণিজ্যের সুবিধা আদায়, ইউরোপের বাজার ধরে রাখা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ এবং বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্বদেশভিত্তিক জনবল বিদেশি জনবলের চেয়ে অধিকতর নিবেদিত হবে। তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় দেশীয় জনবল নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ভিভিআইপি/ভিআইপিগণের সফরকালে স্বদেশিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (প্রটোকল) পালন ছাড়াও ‘তথ্যের গোপনীয়তা’ রক্ষা করে থাকেন। পক্ষান্তরে স্থানীয় (বিদেশি) জনবলের ক্ষেত্রে ‘তথ্যের গোপনীয়তা ও দায়িত্ববোধ’-এর বিষয়ে সবসময় নির্ভর করা যায় না। কারণ তাদের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ওসব দেশের বিদ্যমান সার্ভিস রুলস ও রেগুলেশন মেনে চলতে হয়। অন্যদিকে স্বদেশি জনবল বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী খুব সহজে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তা ছাড়া বাজেট প্রণয়ন ও অডিট নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজকর্ম বাংলায় সম্পন্ন করতে হয়, যা স্থানীয়ভিত্তিক জনবলের দ্বারা সম্ভব নয়। স্বদেশি জনবল নিয়োগে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা যাবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয়ভিত্তিক জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন-ভাতাদি সম্পূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয় বিধায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স অন্য দেশে চলে যায়। তা ছাড়া স্থানীয়ভিত্তিক জনবলের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাদ্রিদ মিশনের ড্রাইভার-কাম-মেসেঞ্জার স্থানীয়ভিত্তিক হওয়ায় তাকে প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। বরং স্বদেশভিত্তিক জনবল চাকরির অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

সর্বশেষ খবর