রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি

নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে গতকাল বঙ্গভবনে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। এর আগে ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করে বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

এদিকে নতুন প্রধান বিচারপতিকে স্বাগত জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, আজ (রবিবার) নতুন প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা সংবর্ধনা জানাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ও সংবর্ধনা জানাবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ এবং পরে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগ, এ দুই সিদ্ধান্তকেই শ্রদ্ধা করেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, উচ্চ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সরকারের পদস্থ বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর আগে শুক্রবার নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আদেশে স্বাক্ষর করার পর আইন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পরপরই পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। ২ অক্টোবর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিএনপি সরকার আমলে ২০০৩ সালে হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারক হন। ২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারক পদে উন্নীত হন। বিচারক হিসেবে কাজ শুরুর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছিলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন তিনি।

দুই সিদ্ধান্তকেই শ্রদ্ধা করেন আইনমন্ত্রী : নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ এবং পরে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগ, এ দুই সিদ্ধান্তকেই শ্রদ্ধা করেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল নিজের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। সেই ক্ষেত্রে তিনি বিচার-বিশ্লেষণ করে যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ার মতো উপযুক্ত মনে করেছেন, তাকেই নিয়োগ দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার এবং আমি সেটাকে শ্রদ্ধা করি।’ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ নিয়োগের পর যিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি ছিলেন, যিনি জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। সে কথা তিনি লেখেন নাই, কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগকেও আমি শ্রদ্ধা করি। কারণ অনিবার্য ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। এটা যেহেতু তার এখতিয়ার, তার পদত্যাগের ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নাই।’ নতুন প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

সংবর্ধনা দেবে সুপ্রিম কোর্ট বার : জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হলেও নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে সংবর্ধনা দেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিম কোর্ট বার)। গতকাল সন্ধ্যায় বার মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর জরুরি সভা ডেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে দেশে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ছিল। এ পদে নিয়োগ না হওয়ায় আইনজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষই উদ্বিগ্ন ছিল। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিষয়ে সমিতির সভাপতি বলেন, ‘অবশ্যই প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে। আইনজীবী সমাজ, দেশের মানুষ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আমরা সব সময় এই আইনজীবী সমিতিকে দলনিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করে আসছি। সে জন্য এ জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেও আমরা। তবু পরিবর্তিত পরিস্থিতে এই নিয়োগটি হয়েছে, তাই আমরা মনে করি এতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির শূন্যপদ পূরণ হয়েছে। এ কারণে নতুন প্রধান বিচারপতিকে স্বাগত জানাই।’ আজ (রবিবার) সকালে প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষেই সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা জানানো হবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সহ-সভাপতি মো. অজিউল্লাহ, উম্মে কুলসুম রেখা, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন।

এক নজরে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন : দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের জন্ম কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে। ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাবা সৈয়দ মুস্তফা আলী ও মা বেগম কাওসার জাহানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন। এর দুই বছর পর ১৯৮৩ সালে আইন পেশা শুরু করেন হাই কোর্টে। এ ছাড়া লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আফ্রিকান স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে ‘কমনওয়েলথ ইয়াং ল ইয়ার্স কোর্স’ সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। বর্তমানে আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে দ্বিতীয় ছিলেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করবেন। তিনি দুবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য করা সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

ওয়াহ্হাব মিঞার নাম বাদ : পদত্যাগপত্র দেওয়ার এক দিন পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিচারপতিদের নামের তালিকা এবং দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নাম। গতকাল রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে আজকের জন্য প্রকাশিত আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের নাম। একইভাবে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের তালিকায়ও প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতির নাম রয়েছে।

সর্বশেষ খবর