রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা ভাষার প্রচলন সে রকম দেখছি না

আবদুল মাতলুব আহমাদ

ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা ভাষার প্রচলন সে রকম দেখছি না

ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মাস। ১৯৫২ সাল থেকে আমরা  দেখতে পেয়েছি বাংলা ভাষার প্রতি জনগণের আকর্ষণ। সেই বায়ান্ন সালের এই ভাষা আন্দোলন থেকেই আস্তে আস্তে ছয় দফা আন্দোলন, দেশ স্বাধীন এবং আজকের এই বাংলাদেশ। কী বিশাল এক রূপান্তর। যেখানে উর্দু ভাষা এ দেশে প্রচলন করার জোর চেষ্টা চলছিল, সেখানে শুধু যে বাংলা ভাষা তা নয়, বাংলা ভাষাভাষির জন্য বাংলাদেশ আজ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা ভাষার প্রচলন এখনো আমরা সেভাবে দেখছি না। বাংলা ভাষার জন্য যে কষ্ট স্বীকার করেছে, এমনকি মৃত্যুবরণও করেছে, সেই ভাষা শহীদদের প্রতি পুরোপুরি সম্মান এখনো ব্যবসায়ীরা দেখাতে পারেননি। আমরা দেখতে পেয়েছি, বিগত দিনে বাংলা ভাষা প্রচলন করার জন্য সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজও সরকারের মধ্যে যে নোট ও চিঠি লেখা হয়, তা বেশির ভাগই বাংলা ভাষাতেই তৈরি করা হয়। কিন্তু এর পরও যদি আমরা সরকারি সাইনবোর্ড ও ব্যবসায়ী সাইনবোর্ড দেখি, রাস্তার সাইনবোর্ড দেখি, এয়ারপোর্ট দেখি, রেলস্টেশন দেখি, দেখা যাবে এখনো বাংলা ভাষা সেভাবে স্থাপিত হতে পারেনি। অনেকে চিন্তা করেন, এত কিছুর পরও কেন বাংলার প্রচলন ব্যবসা-বাণিজ্যে আসছে না পুরোপুরি। এই কারণটা এক কথায় বলা যায়, ডিজিটাল যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে যদিও মোস্তফা জব্বার (এখন মন্ত্রী) সাহেব বাংলা ফন্টের আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু যেহেতু সব সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন ইংরেজিতে ও বাংলায় রূপান্তর কম হয়েছে, তাই বেশির ভাগ মানুষই ইংরেজিতে বলা, লেখার জন্য চেষ্টা করেন। ডিজিটাল যুগ বাংলা ভাষাকে স্থাপন করার জন্য একটা বাধা হয়ে রয়েছে। তাই আমি মনে করি, ব্যবসা-বাণিজ্যে যদি বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করাতে হয় এবং সবখানে যদি বাংলার ব্যবহার আমরা দেখতে চাই, তাহলে ডিজিটাল কার্যক্রম যত সম্ভব দ্রুত বাংলায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব? আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাচ্ছি। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২২ শতাংশ বিনিয়োগে আসতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ তুলতে হবে। আমাদের নতুন নতুন বিনিয়োগের দিকে তাকাতে হবে। এর অর্থ, বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বাড়িয়ে তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আনতে হবে। শুধু বাংলা ভাষা যদি প্রতিষ্ঠা করি, তাহলে বিদেশিদের সঙ্গে কীভাবে কথাবার্তা বলব, আদান-প্রদান করব চিঠিপত্র, কীভাবে আমরা চুক্তিগুলো করব। এটা বড় বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি চীনের দিকে তাকাই, যদিও চীনের সবাই তাদের নিজেদের ভাষা বলেন, লেখেন ও সাইনবোর্ডে ব্যবহার করেন, কিন্তু ইদানীংকালে চীন সরকারের পরামর্শে চীনারা ইংরেজির দিকে ঝুঁকছে, দক্ষতা বাড়াতে ইংরেজির দিকে ঝুঁকছে।

আমি মনে করি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সার্থকতার জন্য এবং ঊর্ধ্বগতির জন্য ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন রয়েছে। তাই যদি আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে বাংলা ভাষা প্রচলন চাই, অবশ্যই তা দেশবাসী ও বাংলা ভাষাভাষির জন্য প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু শুধু বাংলা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই বাংলা ভাষার ওপর জোর দিয়ে, পাশাপাশি ছোট করে হলেও ইংরেজি আমাদের শিখতে ও ব্যবহার করতে হবে। বাংলা ভাষাকে প্রধান করে আমরা যদি ইংরেজি ভাষাকে পাশাপাশি রাখি, তাহলে আমাদের যে অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বগতি, তা ধরে রাখতে সক্ষম হব। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে আমি আশা রাখব, আমরা যারা একেবারেই বাংলা ভাষা ব্যবহার করছি না, তাদের বাংলা ব্যবহার শুরু করতে হবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিও ব্যবহার করতে হবে। তখনই বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা। তখনই হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এবং চেয়ারম্যান, নিটল-নিলয় গ্রুপ।

অনুলিখন : রুহুল আমিন রাসেল

সর্বশেষ খবর