শিরোনাম
শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কবে খালেদার আপিল

রায় বিশ্লেষণে সময় লাগতে পারে

আরাফাত মুন্না

দুর্নীতি মামলায় কারা অন্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিলের প্রস্তুতি চলছে। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফাইড কপি) পেলেই তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৬৩২ পৃষ্ঠার এ বিশাল রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে কত সময় লাগবে? আর এই অনুলিপি পাওয়ার আপিল আবেদন করার জন্য খুঁজে বের করতে হবে রায়ের অসঙ্গতিগুলো। এই কাজে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কত সময় নেবেন সেটাও বিবেচ্য। আইন-আদালতের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ নিয়মে ৬৩২ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে আদালতের প্রস্তুতি থাকলে রায়ের কপি দু-এক দিনের মধ্যেও দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তারা। আইনজ্ঞরা জানান, বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে প্রথমে ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে হবে। তবে তাত্ক্ষণিক এই অনুলিপি পাওয়া না গেলেও সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করা হলে ৩০ দিনের বিধান শিথিল হয়ে যাবে। তারা বলেন, আসামিদের রায় বাতিল ও জামিনের জন্য পৃথক আবেদন করতে হবে। প্রত্যেক আসামির জন্যও আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে। তবে মামলার পলাতক আসামিরা আপিলের সুযোগ পাবেন না বলেও জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়া ছাড়াও অন্য আসামিদের কারাদণ্ডের সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রায়ের পর পরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার ভবনে।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন— মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে তারেক রহমান বিদেশে অর্থ পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে ১০ বছর ধরে দেশের বাইরে পলাতক জীবন-যাপন করছেন। একইভাবে কামাল উদ্দিন  সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। রায়ের পর পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এসব বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে প্রথমে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে হবে। অনুলিপির জন্য আবেদন করা হলে আপিল আবেদন দাখিলের সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে আসামিপক্ষের কোনো অসুবিধা হবে না। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যেই তারা রায়ের সার্টিফাইড কপি পেয়ে যাবেন।’ তবে রায়ের কপি প্রস্তুত না হলে সার্টিফাইড কপি পেতেও সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজা হওয়ায় উচ্চ আদালতে আবেদন করা হলে তিনি জামিন পেতে পারেন বলেও জানান সাবেক এই আইনমন্ত্রী। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘রায়ের সার্টিফাইড কপি দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটা আদালতের ওপর নির্ভর করে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ অনুলিপির জন্য আবেদন করার পর সেটি টাইপ করা হবে। এর ভুলত্রুটি দেখতে হবে। আদালতের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরের পরই সংশ্লিষ্টদের রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সরবরাহ করা হয়। সে ক্ষেত্রে রায়ের অনুলিপি প্রস্তুত হতে যে সময় লাগে সেটিই সময়। এর বাইরে কোনো সময় প্রয়োজন হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ আদালতের এই মামলায় রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে পলাতক আসামিরা আপিলের সুযোগ পাবেন না।’ রায়ের বিরুদ্ধে কবে আপিল করা হবে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করেছি। অনুলিপি পাওয়ার পরই আবেদন করব। সে জন্য দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অনুলিপি পাওয়ার পর সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে- রায়ে কী কী অসঙ্গতি রয়েছে। ওই অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেই আপিল আবেদন করা হবে। পাশাপাশি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জামিন আবেদনও করা হবে।’ রায়ের পর আপিলের বিষয়ে এ মামলায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে দেরি হলে আমাদের যেন রায়ের ফটোকপি দেওয়া হয়। আমরা আদালতকে এ বিষয়টি জানিয়েছি, আদালত এ বিষয়ে কিছু বলেনি।’ তিনি জানান, রায়ের ফটোকপি  পেলেও তারা সেটি নিয়ে আপিল করতে পারবেন।  প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এতিমদের জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন। এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরু করেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। গত ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত হলে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর