শিরোনাম
রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই নেতার দুই কথা

বিএনপির উচিত দণ্ডিতদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করা

------- মাহবুব-উল আলম হানিফ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির উচিত দণ্ডিতদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করা

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে জেলে যাওয়ার পর আরেক দণ্ডিত তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপিতে যেসব নেতা দেশের জন্য, জনগণের জন্য রাজনীতি করেন তাদের উচিত হবে দণ্ডিতদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন-ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুঁজে নিয়ে সেই নেতৃত্বের পেছনে রাজনীতি করা। অহেতুক দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেওয়া ঠিক হবে না। যারা দণ্ডিত তাদের পক্ষ নিয়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া মানেই দুর্নীতিকে সমর্থন করা। দেশের জনগণ দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে। এগুলো দেশবাসী সমর্থন করে না। মাহবুব-উল আলম হানিফ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ করছিলেন। তার সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার রায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়।  খালেদা জিয়ার রায়ে বিএনপি লাভবান— দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এ মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে হানিফ বলেন, বিএনপি লাভবান হয়েছে কি হয়নি তা মওদুদ সাহেব ভালো বলতে পারবেন। এ রায়ের মাধ্যমে যারা দুর্নীতিবাজ, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, এরকম ব্যক্তি যদি দণ্ডিত হয়ে রাজনীতি থেকে বাদ পড়ে যান তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো পরিচ্ছন্নরা বিএনপির নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবেন। তখন তারা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সেই বিবেচনায় মওদুদ আহমদ বলতেই পারেন, খালেদা জিয়ার রায়ে বিএনপি লাভবান হয়েছে। হানিফ বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্তরা যদি বিএনপি থেকে সরে যান, তাহলে ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরাই বিএনপির নেতৃত্বে আসবেন। তাতে হয়তো বিএনপি তাদের ইমেজ ফিরে পেতে পারে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আদালতের রায়ে দণ্ডিত। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন নেতাদের নিয়েই দল গঠন করা উচিত। 

খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না পান তাহলে কি একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল হানিফ এমপি বলেন, বিএনপি কি এক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল রাজনৈতিক দল? তিনি আদালতের রায়ে দণ্ডিত। দণ্ডের কারণে যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন তাহলে গোটা বিএনপি অংশ নেবে না! নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে আমার মনে হয়, নির্বাচন বর্জনের এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বিএনপি দ্বিতীয়বার নেবে না। বিএনপি বার বার ভুল করবে বলে মনে করি না।  

একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী ও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানের জেল হলো— এতে কি আন্তর্জাতিক মহল থেকে কোনো চাপ আসছে? প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী ও দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ থাকবে কেন! এটা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ মামলায় ২৫ বার উচ্চ আদালতে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সাক্ষ্য গ্রহণ করতে আদালতের ২৩৬ কার্যদিবস সময় লেগেছে। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য উপস্থাপনে ব্যয় হয়েছে আদালতের ২৮ কার্যদিবস। ১৪০ দিনের বেশি সময় নিয়েছেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় দিয়েছেন। এখানে আন্তর্জাতিক চাপের কথা আসবে কেন?

তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি নেত্রী যে দুর্নীতি করেছেন, এটা নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও বিশ্বাস করতেন। সে কারণেই তারা দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছেন। তাদের দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় দলের সদস্য পদের অযোগ্যতার বিষয়ে উল্লেখ ছিল, কারও দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর তিনি দলের সদস্য থাকতে পারবেন না। পরে তা সংশোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় আরেক দণ্ডিত তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এতে তারা প্রমাণ করেছে বিএনপি দুর্নীতিবাজদের একটি প্লাটফর্ম। এই দলের নেতৃত্বের মধ্যে নীতিবান লোক নেই। এরা দেশের জন্য নয়, জনগণের জন্য নয়, এরা একটি পরিবারের দুর্নীতির জন্য রাজনীতি করেন।   

খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর পরিণাম শুভ হবে না— এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের এমন হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, জেলে কি আমরা পাঠিয়েছি? এ ধরনের কথাবার্তা ঠিক নয়। আইনের প্রতি যাদের শ্রদ্ধা নেই তারাই এ ধরনের কথাবার্তা বলেন।

খালেদা জিয়ার মামলার রায় জাতিকে কী বার্তা দিল— জানতে চাইলে সরকারদলীয় কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি হানিফ বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বাংলাদেশে আইন যে সবার জন্য সমান তা প্রমাণিত হয়েছে। রায়ের আগে বিএনপি নেতারা এমন ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলা শুরু করেছিলেন, যেন তারা অপরাধ করেছেন— সেটা বড় বিষয় নয়। বিষয়টি হচ্ছে তাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে কেন? আসলে যারা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, তারাই নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে। তবে এ রায়ের মাধ্যমে দেশ-জাতি খুশি। এ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, যে যত বড় রাজনীতিবিদ বা ক্ষমতাবান হোক না কেন, অন্যায় করলে আইনের আওতায় আসতে হবে। এখন দুর্নীতি করতে গেলে ভীতি কাজ করবে। দুর্নীতি-অন্যায় কমে আসবে। অনেকেই বলছেন, খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া অনিশ্চিত হলো। এটা কোনো কথা হতে পারে না। বেগম খালেদা জিয়া দলের একজন শীর্ষ নেতা। তার সাজার কারণে একটি দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে, এটা হতে পারে না। একটি দলের শীর্ষ নেতার নির্বাচনের প্রয়োজনে যদি তাঁর অপরাধ মাফ করে দিতে হয়, বিচার বন্ধ করে দিতে হয়, তাহলে তো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে না। অপরাধী সাজা পাবেন না। সবাই অপরাধ করে রাজনীতির দোহাই দিয়ে মুক্ত হয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই হবে। নিয়ম অনুযায়ী সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। এখানে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার কিছুই নেই। এ রায়কে ঘিরে বিএনপি যদি মনে করে, তারা ন্যায়বিচার পায়নি তাহলে তাদের উচিত উচ্চ আদালতে আপিল করা। রায়কে কেন্দ্র করে অহেতুক উসকানিমূলক বক্তব্য দিলে, নৈরাজ্য-নাশকতা করলে জনগণ মেনে নেবে না।

সর্বশেষ খবর