রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই নেতার দুই কথা

ফরমায়েশি রায়ে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন ওঠে না

----- বরকত উল্লা বুলু

মাহমুদ আজহার

ফরমায়েশি রায়ে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন ওঠে না

চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এ মুহূর্তে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য সবচেয়ে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু। তিনি বলেন, ‘রায়ের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি বক্তৃতা-বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে “দুর্নীতিবাজ” আখ্যা দিয়ে “সাজা”ও দিয়ে ফেলেছেন। জিয়া পরিবারকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন তারা। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত এখনো জিয়া পরিবারকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেয়নি। তাই বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতা নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন। আর রায় যে ফরমায়েশি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা প্রমাণিত হয়েছে। এটা রাজনৈতিক মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি রায়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আগে দুর্নীতিবাজ বলা আইনের দৃষ্টিতেও ঠিক নয়।’

গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা। আলাপচারিতায় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতিতে আসা, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া, ’৯১-এ বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি ওয়ান-ইলেভেন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আপসহীন ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রী বেগম জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আশা করি, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শিগগিরই বেগম জিয়া মুক্তিলাভ করবেন। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তাকে মুক্ত করতে আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি।’

যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি রাজনৈতিক মামলায় বেগম জিয়াকে রায় দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এ সাজা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে বেগম জিয়া কোনো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তা এ দেশের পাগলও বিশ্বাস করবে না। কার্যত বেগম জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আবারও একদলীয় শাসনব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে কায়েম করতে চায় সরকার। বিএনপিকে ভাঙতে চায় তারা। কিন্তু তাকে জেলে নিয়ে বিএনপি ভাঙা বা দুর্বল করে দেওয়ার চিন্তা দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রায় ১১ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় বেগম জিয়ার নেতৃত্বে এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়েও শক্তিশালী। বেগম জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আনেন। রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার থেকে আলাপ-আলোচনা করে দেশে প্রথম সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেন। এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা। আজকে যে দেশে নারী শিক্ষা, মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনা ও বই, উপবৃত্তি এটা তারই অবদান। বাংলাদেশের মানুষ তাকে মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে।’

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি ভাঙবে কিনা— জানতে চাইলে বলেন, ‘বেগম জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যারা মনে করছেন, দল ভেঙে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আজকের গৃহপালিত বিরোধী দলের মতো হয়ে বিএনপি কখনই সংসদে যাবে না। এইচ এম এরশাদের মতো অনুগত দল করা সম্ভব নয়। তাই দীর্ঘ ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও বিএনপির ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত এত গুম-খুন, জেল-জুলুম-অত্যাচারের পরও একজনকেও দলচ্যুত করতে পারেনি সরকার। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মুক্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক শহীদ জিয়ার আদর্শে জাতীয়তাবাদী শক্তি। আর সেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের এখন মূর্তপ্রতীক হলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ কারণেই বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। ’

এক দেশে দুই আইন চলছে দাবি করে বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘বিগত ওয়ান-ইলেভেন আসার পর দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা ছিল। আর বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ছিল ৪টি। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর আস্তে আস্তে শেখ হাসিনাসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সাড়ে ৭ হাজার মামলা উধাও হয়ে যায়। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে ৪টি মামলা ছিল সেখান থেকে এখন ৩৭টি মামলা হয়ে যায়। এখন আমাদের প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়। ৭৫ হাজার মামলায় সাড়ে ১৮ লাখ নেতা-কর্মী এখন আসামি। দেশে এখন আইনের শাসনের পরিবর্তে শেখ হাসিনার আইন চলছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন-বিএনপিবিহীন একটি ভোট করতে চায় সরকার। অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা। এই নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই বিএনপি-প্রধানকে জেলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দেশের জনগণ তা হতে দেবে না। ২০১৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বেগম জিয়া আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।’

বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল কীভাবে চলবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দল কীভাবে চলবে সে বিষয়ে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে রয়েছেন। তিনি এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। স্থায়ী কমিটি ও দলের মহাসচিব রয়েছেন। এখানে সবাই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই দল চলবে। গত কয়েক দিন আন্দোলন কর্মসূচি হয়েছে সহিংসতামুক্ত। আন্দোলন-সংগ্রামে সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্তেরই অংশ। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালিত হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর