রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

উচ্চশিক্ষায় বাংলা ব্যবহারে অনুবাদ সেল গঠন জরুরি

ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

উচ্চশিক্ষায় বাংলা ব্যবহারে অনুবাদ সেল গঠন জরুরি

উচ্চশিক্ষায় আমরা এখন একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষার ব্যবহার থাকতে হবে। এর সঙ্গে ছেলেমেয়েদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করে দ্বিতীয় কোনো ভাষায়ও দক্ষতা  অর্জন করতে হবে। এটাকে ‘যোগাযোগ ও সহযোগিতা দক্ষতা’ বলা হয়। আমাদের নিজেদের ভাষায় যোগাযোগ করতে পারার পাশাপাশি বিশ্বের প্রচলিত ভাষাও শিখতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে তৈরি করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। তাতে সমৃদ্ধ হবে আমাদের অর্থনীতি। অন্য ভাষার তুলনায় মাতৃভাষায় শিক্ষার্থীরা বেশি ভালো শিখতে, বুঝতে এবং বোঝাতে পারে। অন্য ভাষায় তারা অতটা দক্ষ হয় না। দক্ষতা থাকলেও শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষা যেমন আত্মস্থ করতে পারে অন্য ভাষায় তা পারে না। আমরা চাইছি ছেলেমেয়েদের ভাষার দক্ষতা বাড়াতে। এ জন্য আমি শ্রেণিকক্ষে বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই তথ্য উপস্থাপন করি। এতে করে শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়ায় কোনো সমস্যা থাকে না। তারা দুটো ভাষাতেই সম্যক জ্ঞান লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার জায়গা। এখানে তৈরি হয় নতুন জ্ঞান। শিক্ষার্থীদের বিশ্ব সম্পর্কে জানতে এবং যে কোনো বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। কারণ উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ বই ইংরেজিতে লেখা অথবা অনুবাদ করা। এ

জন্য ইংরেজি বুঝলে তারা নতুন কিছু জানতে পারে। কিন্তু এ বিষয়গুলো যদি বাংলাতে অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো যায় তাহলে তাদের বোঝাপড়ার জায়গাটা আরও সহজ হবে। যেমন— জাপান, ভারত তাদের নিজেদের ভাষায় মৌলিক বইগুলো অনুবাদ করে উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করে। তারা প্রচুর পরিমাণ বই, জার্নাল তাদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করেছে। আমাদেরও এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে (এনসিটিবি) মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছে। এভাবে বই সবার হাতে পৌঁছে দেওয়া প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ঠিক একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে একটি ‘অনুবাদ কোষ’ গঠন করা যেতে পারে। প্রতিটি বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের সমন্বয়ে মৌলিক বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করা যেতে পারে। এই কাজটি সম্পন্ন করতে গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এই গবেষকদের পর্যাপ্ত অনুদান এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি বিষয়ে মাতৃভাষায় মৌলিক ধারণা নিতে পারবে। মাতৃভাষায় পড়া এবং বোঝার কারণে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আর অস্পষ্টতা থাকবে না। বাংলায় অনুবাদ করা বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলে তারা বিদেশি বই কেনার জটিলতা এবং উচ্চমূল্যের হাত থেকে রেহাই পাবে।

লেখক : শিক্ষক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর