মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আরও তিন মামলায় গ্রেফতার খালেদা

রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাননি আইনজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরও তিন মামলায় গ্রেফতার খালেদা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারান্তরিন্ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তেজগাঁও ও শাহবাগ থানায় করা দুটি এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দায়ের করা নাশকতার মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নতুন করে শ্যোন অ্যারেস্ট হওয়ায় অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার পাশাপাশি এ দুই মামলায়ও পৃথক করে জামিন নিতে হবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এদিকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় গতকাল পর্যন্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আজ রায়ের কপি পাওয়ার আশা তাদের।

শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজধানীর তেজগাঁও, শাহবাগ ও কুমিল্লা থানার তিনটি মামলায় জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি আমরা হাতে পেয়েছি। এখন তার মুক্তির জন্য এ তিন মামলায় জামিন নিতে হবে।’ সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভির সালেহিন ইমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কুমিল্লায় নাশকতার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছিল। ওই দুই মামলায়ই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা পরোয়ানার কপি ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’ এখন ঢাকা থেকেই এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান। রায়ের সার্টিফায়েড কপির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায়ের পরই আমরা সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেছি। সোমবার পর্যন্ত আমাদের কপি সরবরাহ করা হয়নি। সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পরই আমরা আপিল ও জামিনের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করব। আশা করছি মঙ্গলবার (আজ) কপি হাতে পাব।’ পাঁচটি গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় সে বিষয়টি আমরা দেখছি।’

পাঁচ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা : দুর্নীতি মামলায় কারান্তরিন্ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতা ও মানহানিসহ পাঁচটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। মামলাগুলো হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রলবোমায় আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার একটি মানহানির মামলা, ভুয়া জন্মদিন পালন করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম নষ্টের একটি মামলা এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের একটি মামলা। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর খালেদা জিয়া এসব মামলায় জামিন নেননি। তাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর আবার এ পাঁচ মামলায়ও তাকে জামিন নিতে হবে। আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় গত বছর ৯ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা জজ আদালত। একই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় চলতি বছর ২ জানুয়ারি কুমিল্লার ৫ নম্বর অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রায়ের পরপরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার ভবনে।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে তারেক রহমান বিদেশে অর্থ পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে ১০ বছর ধরে দেশের বাইরে পলাতক জীবন যাপন করছেন। একইভাবে কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। রায়ের পর পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি করেছেন আদালত। ১০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এতিমদের জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগপত্র  (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন।

এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরু করেন। গত বছর ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত হলে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।

সর্বশেষ খবর