বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার চট্টগ্রামে বাসে প্রশ্নপত্র

বহিষ্কার ২৪, মামলা ৯ জনের বিরুদ্ধে

প্রতিদিন ডেস্ক

চট্টগ্রামে পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীর হাতে প্রশ্ন আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে ২৪ জন বহিষ্কার, ৭জন আটক, ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও গলাচিপায় ফোন রাখায় দুই শিক্ষকের ৭ দিনের ও কুমিল্লায় যুবকের দুই বছরের কারাদণ্ড   হয়েছে।

এ ছাড়া ভালুকায়  প্রশ্নপত্রসহ ৪ জন, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে একজন, দিনাজপুরের বিরলে ৩ পরীক্ষার্থী, বোঁচাগঞ্জে শিক্ষার্থী আটক হয়। এ সংক্রান্ত নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগেই শিক্ষার্থীর হাতে চলে আসে প্রশ্নপত্র। একটি বাসে বসে দেখছে সেই প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনেই পাওয়া গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। পরে আসল প্রশ্নের সঙ্গেও মিলে যায় ওই প্রশ্ন। গতকাল ছিল এসএসসির পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। ওই বাসে ছিল পটিয়া আইডিয়াল স্কুলের ৫০ পরীক্ষার্থী। তাদের কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরীক্ষা কেন্দ্রে বসার জন্য তারা কেন্দ্রের অনতিদূরে ওয়াসার মোড়ে বাসের ভিতরে অপেক্ষা করছিল। এ সময় বাসে অভিযান চালিয়ে ওই প্রশ্নসহ ৫০ জনকে পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন। এ ঘটনায় ২৪ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, গতকাল সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে ওয়াসা মোড়ে একটি বাসে পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে দেখে সন্দেহ হয়। বাসে উঠে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু পড়ছে। পরে তাদের তল্লাশি করে বেশ কিছু মোবাইল ফোন তল্লাশি করে পদার্থবিজ্ঞানের খ সেটের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাওয়া যায়। কিছু প্রশ্নের সফটকপিও পাই। সেগুলো তারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হাতে পাওয়া পাঁচটি ফোনেই পদার্থবিজ্ঞানের এমসিকিউ প্রশ্ন ছিল। উদ্ধারকৃত প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্ন মিলে যায়। মানবিক বিবেচনায় তাদের পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে তদন্ত করে ২৪ জনকে বহিষ্কার এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।’  ৭ পরীক্ষার্থী আটক : ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকো বনানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন একটি মসজিদের সামনে থেকে এএসসি পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে প্রশ্নসহ সাত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। গতকাল সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের মোবাইল ফোনে থাকা প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্ন মিল পাওয়া যায়। ওই সাতজন ফটিকছড়ির বাগান বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, গজারিয়া জেবুন্নেসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং চিকনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের আটক করা হলেও ওই সাত শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়েছে।  ফটিকছড়ির ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মো. শহীদুল হক বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে মসজিদের সামনে নয় শিক্ষার্থী এবং কেন্দ্রের ভিতরের প্রাঙ্গণ থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ। ওই ১০ জনের মধ্যে তিনজনের কাছ থেকে অন্যরা বই নিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল। বাকি সাতজনের কাছে প্রশ্ন ছিল। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়।’  তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, একটি ফেসবুক পেইজ থেকে তারা গত সোমবার রাতে প্রশ্ন পেলেও সেটা মেলেনি। গতকাল সকালে দেড় হাজার টাকায় ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রশ্ন পেয়েছে তারা। কীভাবে টাকা দিয়েছে, কার কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়েছে- এসব বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’  কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশ থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী সিন্ডিকেটের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকালে তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত খাইরুল ইসলাম (২১) উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। সে এ বছর কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে সিভিলে ডিপ্লোমা পাস করেছে। মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দুটি স্যামসাং স্মার্ট মোবাইল ফোন সেট ও এর মধ্যে থাকা পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। রামচন্দ্রপুর রামকান্ত স্কুলের শহীদ মিনারের মাঠে প্রশ্ন ও উত্তর বিক্রি হচ্ছে খবর পেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উভয়েই ঘটনাস্থলে এসে হাতে নাতে দুটি স্যামসাং মোবাইল ফোন সেটসহ খাইরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মের ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করায় গতকাল বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ সময় তাকে সহায়তা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)  রায়হান মেহবুব, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই রিদওয়ানুল হক। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম বলেন, গ্রেফতার করা খাইরুলের মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ফাঁসকারী অনেকের ফোন নম্বর ও ছবি রয়েছে। অপরাধ স্বীকার করায় তাকে দুবছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে প্রশ্নপত্রসহ চারজনকে আটক করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের সোনারবাংলা উচ্চ বিদ্যালয় ও ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে আটক করা হয়। এরা হচ্ছেন- সবুজ মিয়া (৩৫), মনোয়ার হোসেন (২১), মিনারা খাতুন (৩৫) ও হুদার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা (৩৭)। ভালুকা মডেল থানার এএসআই খলিলুর রহমান জানান, সোনারবাংলা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে থেকে মোবাইলে পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার ক ও খ ফুল সেট প্রশ্নপত্রসহ সবুজ মিয়াকে আটক করা হয়। অন্যদিকে, ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের পেছনে থেকে সবুজ মিয়া, মনোয়ার হোসেন, মিনারা খাতুন ও জাকিয়া সুলতানাকে আটক করা হয় বলে জানান এএসআই আল আমীন। তিনি বলেন, একসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করছিল। আটক তিনজনের মধ্যে মিনারার মোবাইলে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থেকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তি হচ্ছে সিজন খান ওরফে আবদুল কাইয়ুম খান। তার বাড়ি ভুয়াপুরের অর্জুনা গ্রামে।  দিনাজপুর : দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পরীক্ষার্থী ওমর ফারুককে আটক করা হয়েছে। ওমর ফারুক আনোয়ারা ধদইর গ্রামের আবদুর রশিদের পুত্র এবং সে বোচাগঞ্জের দৌলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। বোচাগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রউফ জানান, মোবাইল ফোনে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহসান হাবীব বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে, দিনাজপুরের বিরলে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কারসহ পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুঠোফোনে দেখার সময় ৩ পরীক্ষার্থীকে মুঠোফোনসহ হাতেনাতে আটক করেছেন ইউএনও। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : গলাচিপায় পরীক্ষা কেন্দ্রে টাচ ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় দুজন প্রধান শিক্ষককে ৭ দিনের জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উলানিয়া হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দুজন প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে টাচ ফোন নিয়ে ঘোরাঘুরির সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাতেনাতে ধরে ফেলেন পানখালী পানজাতীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম ও পার ডাকুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র শীলকে। দুপুরে তার কার্যালয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ আদেশ দেন।

সর্বশেষ খবর