শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রায়ের কপি পাননি, গৃহকর্মীর অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রায় ঘোষণার সাত দিন পার হলেও সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) না পাওয়ায় আজও আপিল করতে পারছেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের মামলার রায়ে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে কারাগারে রয়েছেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই রায়ের কপি পাওয়ার আশা করে আসছিলেন তার আইনজীবীরা। তবে গতকালও রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আইনজীবীরা বলেন, বৃহস্পতিবার কপি পেলে রবিবার হাই কোর্টে আপিল আবেদন করা হবে। এদিকে একটি মানহানি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করেনি আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে মামলার বাদী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বাদীর আবেদনটি গ্রহণ না করে আগামী ১৪ মার্চ গ্রেফতার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দিন ধার্য করেন। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দেখা করতে চেয়ে বিফল হয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন জানান সাত চিকিৎসক। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে প্রয়োজনে ডাকা হবে বলে জানিয়ে দেয়। সাত ডাক্তার হলেন— অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুস, সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ, মো. শাহাব উদ্দিন, এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেলিম এবং ফাওয়াজ হোসেন শুভ ও মনোয়ারুল কাদির বিটু। দুপুর সোয়া ২টার দিকে জেল গেট থেকে বেরিয়ে অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস বলেন, জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি দেয়নি। আমাদের জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে ডাকা হবে আমাদের।

অপেক্ষা আইনজীবীদের : বিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, রায়ের সার্টিফায়েড কপি আজ পাইনি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পাব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রায়ের কপি পাওয়া গেলে রবিবার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করা হবে। একই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করা হবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। তিনি সেদিন ৬৩২ পৃৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়েন। এরপর বিএনপির আইনজীবীরা রায়ের অনুলিপি পেতে আবেদন করেন। রায় ঘোষণার দিন থেকেই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে বন্দী আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

গ্রেফতার দেখানোর আবেদন নাকচ : মানহানির এক মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেও ফল পাননি বাদী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের কাছে এ আবেদন দাখিল করে আওয়ামী লীগের এই সমর্থক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মামলায় অনেক আগেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, যা কার্যকর করা বা তামিলের অপেক্ষায় ছিল।’ তিনি বলেন, ‘তিনি যেহেতু অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন তাই এই মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করেছি। শুনানি নিয়ে বিচারক পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’ বিকালে বিচারক মামলাটিতে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনটি নাকচ করে দেন।

ফাতেমাকে সঙ্গে থাকার অনুমতি : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত গৃহকর্মী ফাতেমাকে থাকার অনুমতি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বিকালে তাকে কারাগারে প্রবেশ ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কারাবিধির আলোকে ফাতেমাকে পরিচারিকা হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন ইচ্ছা করলেই ফাতেমা খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকতে পারবেন।

এদিকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনুমতি না নিয়েই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে পৌঁছান সাত চিকিৎসক। তারা হলেন অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. সাহাব উদ্দিন, অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. মো. ফাওয়াজ হোসেন শুভ ও ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটু। কারাফটকের কাছে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেডে তাদের আটকে দেওয়া হয়। পরে তারা কারা অধিদফতরে গিয়ে জেল সুপার বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু কারাগারের ভিতরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার সব ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তাদের আবেদন নাকচ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘কারা অধিদফতর বরাবর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার আবেদন করেছি। কারা মহাপরিদর্শক ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা অনুমতি দিতে অপারগতা জানিয়েছেন। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছি, সারা দেশের মানুষ যেমন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন আমরাও তেমনি উদ্বিগ্ন।’

সর্বশেষ খবর