শিরোনাম
সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার আপিল নিয়ে সমন্বয়হীনতা

ড্রাফটিং তিন চেম্বারে, অনুলিপি পেতে সাত আবেদন, কাছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা বৈঠকে বসেননি আইনজীবীরা, রায়ের কপি পাওয়া যাবে আজ, না পেলে ধর্মঘট

আরাফাত মুন্না

খালেদার আপিল নিয়ে সমন্বয়হীনতা

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল করা নিয়ে তার আইনজীবীদের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। সিনিয়ররা কেউ কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে পৃথক পৃথক চেম্বারে আবেদনের খসড়া তৈরি করছেন। রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতেই আবেদন করেছেন তাঁর সাত আইনজীবী। খালেদা জিয়ার একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীদের উচিত ছিল, একসঙ্গে বসে আপিলের সম্ভাব্য ভিত্তি ঠিক করা। তারা এ ধরনের কোনো আলোচনা করেননি। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন পৃথকভাবে আপিল আবেদন প্রস্তুত করছেন। এই তিনজনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পরপরই আপিল আবেদন করা হবে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হলেও ফাইলিং আইনজীবী কে হবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। আর হাই কোর্টের কোন বেঞ্চে আবেদনটি নিয়ে যাওয়া হবে তাও চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা। রায় ঘোষণার পর সাত জন আইনজীবী সার্টিফায়েড কপি চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। সবার আগে কপি নেওয়ার জন্য তদবিরও করছেন তারা। আর কারাগারে ওকালতনামা দিয়ে আসার এক সপ্তাহ পরও তা ফেরত না পাওয়ায় নিজেদের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন দলটির অনেক আইনজীবী। সার্টিফায়েড কপি উঠানোর বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া সিনিয়রদের কথা শোনেননি বলেই এত বিলম্ব হচ্ছে। এ অভিযোগ অন্য আইনজীবীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি সমর্থক এক আইনজীবী জানান, ‘ম্যাডামের অন্য মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ফাইল তৈরি করে তা মৌখিকভাবে অন্য সিনিয়রদের জানান। পিটিশনটি এফিডেভিট (হলফনামা) হয়ে গেলে এর ১০-১২টি কপি সিনিয়রদের চেম্বারে তিনি পাঠিয়ে দেন। এ মামলায় অন্য চেম্বারগুলো থেকে এমনটা দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত তারা কোনো বৈঠকই করতে পারেননি। আইনজীবীদের রাজনীতির কারণেই রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এই আইনজীবী বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ ও খোকন সানাউল্লাহ মিয়াকে বলেছিলেন, সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় ঢাকা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শতাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে, যাতে একটা চাপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু তিনি কাউকে না নিয়ে একাই যান। পরে সে কাজটিই তিনি করলেন, এক সপ্তাহ পর।

সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের সিনিয়ররা মিটিং করছেন। আপিলে তারা কাজ করবেন।’ তিনি বলেন, ‘যার যেটা কাজ তিনিই সেটা করছেন। আমার কাজ রায়ের কপি তোলা, আমি সেই কাজেই ব্যস্ত রয়েছি।’ সার্টিফায়েড কপির জন্য সাতটি আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা এই মামলায় আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন, তারা সবাই তো কপি চাইতে পারেন।’

রায়ের কপি আজ না পেলে কাল থেকে ধর্মঘট : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) আজকের মধ্যে দেওয়া না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান ধর্মঘট করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে প্রতিদিনই রায়ের কপি পাওয়ার আশা প্রকাশ করে আসছিলেন তারা। সর্বশেষ গতকাল আদালতের আশ্বাসের পরেও কপি না পাওয়ায় এই ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেয় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিদিনই আমাদের রায়ের কপি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। দেই দিচ্ছি করে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার করা হয়েছে। আর নয়। সোমবার রায়ের কপি আমাদের না দেওয়া হলে মঙ্গলবার থেকে আদালত প্রাঙ্গণে আমরা অবস্থান ধর্মঘট পালন করব। এর আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, ‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেতে রবিবার বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে পিটিশন দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রবিবারের মধ্যেই অনুলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন।’ তবে ওই আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন বলেন, ‘বিচারক বলেছেন, সার্টিফায়েড কপি সোমবার দেওয়া হবে। আইনজীবীরা ভুল শুনেছেন।’ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। তিনি সেদিন ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়েছিলেন। এই রায়ের অনুলিপি পেলে হাই কোর্টে আপিল করে জামিনের আবেদন জানাবেন খালেদা। তাতে তার কারামুক্তি মিলবে বলে আশায় আছে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর