বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ অমর একুশে

বিশেষ প্রতিনিধি

আজ অমর একুশে

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারা বিশ্বের মানুষের নিজ নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকারের দিন, মহান শহীদ দিবস আজ। একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য নির্ভয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় শোকের দিন। এ দেশের মানুষ প্রথম ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ১৯৫২ সালে। এ ঐক্যের ভিত্তিমূল ছিল মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা। বাঙালির বুকের রক্ত সৃষ্টি করেছে অমর একুশে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আত্মোৎসর্গের নজির সৃষ্টি করে বাংলাদেশের মানুষ। ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা/ সেই থেকে শুরু/ সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা।’ মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিউরসহ বীর সন্তানেরা। এ অমর বীরগাথা আজ কেবল এ ভূখণ্ডের সীমানায় আবদ্ধ নেই, বাঙালির আত্মত্যাগ স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত। এ গৌরব বাঙালির, বাংলাদেশের। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীজ বপন হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। একুশের আত্মত্যাগের মাধ্যমে উন্মেষ ঘটে বাঙালি জাতীয়তাবাদের। সেই জাতীয়তাবাদী চেতনার পথ ধরে ১৯৭১-এর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এখনো জাতির প্রতিটি সংকট মুহূর্তের অনুপ্রেরণা একুশের চেতনা। আজও অমর একুশে অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অন্তর্নিহিত শক্তি আর অদম্য সাহস হয়ে আছে। একুশ মানে মাথা নত না করা। আজ একুশ এসেছে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাধ্যমে জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে। অপরাজনীতি পেছনে ফেলে জাতি এবার স্বস্তির সঙ্গে পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি।

অমর একুশে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে ভাষাশহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। দেশের সর্বত্রই আজ প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ ছাড়াও রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান ও অন্যান্য স্থানে ভাষাশহীদদের কবরে ফাতিহা পাঠ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রথম প্রহরে বিনম্র শ্রদ্ধা :  একুশের প্রথম প্রহরে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে উঠেছিল সারা দেশের মানুষ। একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান একুশের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে মহান একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় বেজে ওঠে অমর একুশের গানের করুণ সুর। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিরোধী দল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও দূতাবাস প্রধানরা। এর আগে রাত ১১টা ৫১ মিনিটে শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে শহীদ বেদিমূলে নিয়ে যান। এদিকে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর পরই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও ডিনগণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন ছাড়াও ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, শিশু-কিশোর সংগঠনগুলো এবং হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধভাবে একে একে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানান মহান ভাষা শহীদদের প্রতি।

সর্বস্তরের মানুষের ঢল : একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানো শেষে শহীদ মিনারের বিভিন্ন পয়েন্টে সর্বস্তরের মানুষের ঢল বাড়তে থাকে। শাহবাগ মোড়, পলাশী মোড়, কাঁটাবন, নীলক্ষেত মোড়সহ শহীদ মিনারের আশপাশে সময় গড়ানোর সঙ্গে বাড়তে থাকে এ ভিড়। এ সময় ফুল নিয়ে ‘২১ মানে অহংকার’, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানসহ নানা ধরনের স্লোগান দেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষেরা। সমবেতভাবে ফুলের মালা নিয়ে হাঁটা লোকের সংখ্যাও ছিল অনেক। গালে শহীদ মিনারের আল্পনা আঁকা কারও কারও। শহীদদের শ্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢলকে শৃঙ্খলায় রাখাতে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডেট কোর ও স্কাউটের সদস্যরা। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে শহীদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অগণিত মানুষকে।

বিএনপি শ্রদ্ধা জানাবে আজ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় অন্যবারের মতো এবার শহীদ  মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রব্ধা জানাতে পারছেন না। তবে তার পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ ভোরে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর