বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসের ছয় কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশ্ন ফাঁসের ছয় কারণ

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে ছয়টি কারণ শনাক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘প্রশ্ন ফাঁসের কারণ ও সে বিষয়ে করণীয়’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এসব কারণ শনাক্ত করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও সরবরাহ করলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের নতুন উপায় খুঁজছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন এমন আভাস দিয়েছেন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।  প্রশ্ন ফাঁসে মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত করা এসব কারণে বলা হয়— বিজি প্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে। তারা প্রশ্ন কপি করতে না পারলেও স্মৃতিতে ধারণ করে প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে। ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্ন গ্রহণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ থাকলেও অনেক কেন্দ্রে কর্মকর্তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়ায় জনবল সংকটে নির্ধারিত ৩০ মিনিটের পূর্বেই প্রশ্ন খোলা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে। এখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। আরও বলা হয়, পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। গুটিকয়েক শিক্ষক-কর্মচারীর কারণে প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘাটতির কারণে অনেকে প্রশ্ন ফাঁসে সাহস পাচ্ছে। এ ছাড়া বিটিআরসির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সন্দেহজনক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হচ্ছে না। নানা কারণেই ফাঁস হচ্ছে প্রশ্ন।

বৈঠক শেষে শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না ও বিতরণ করাও হবে না।

তাহলেই ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ কারণে একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরি করতে সকলে একমত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে কোনো প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। হয়তো কোনো ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমি যেটা মনে করি প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে এ পদ্ধতিতে কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সভায় অংশ নেন। চলতি এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর অভিযোগ যাচাইয়ে একটি কমিটি করে সরকার। ওই কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানোর পরদিনই শিক্ষামন্ত্রী এই সভা ডাকলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর