শিরোনাম
শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত

আপিল গ্রহণ, জামিন শুনানি হবে রবিবার আরেক মামলায় গ্রেফতারের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাই কোর্ট। এ ছাড়া এ মামলায় বিচারিক আদালতের নথিপত্র ১৫ দিনের মধ্যে হাই কোর্টে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের আপিলের গ্রহণযোগ্যতা ও জামিন আবেদনের শুনানি করে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বরকত উল্লা বুলু, খায়রুল কবির খোকন, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শিরিন সুলতানা, শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি কেন্দ্র করে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট আদালতকক্ষের সামনে ব্যাপক ভিড় সৃষ্টি হয়। বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে আদালতকক্ষের ভিতরে ঢুকতে অনেক সংবাদকর্মীকে বেগ পেতে হয়েছে। কেউ কেউ ভিতরে ঢুকতেও পারেননি।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা আসামিপক্ষের কাছ থেকে জামিন আবেদনের কপি পেয়েছি। আমাদের সময়ের প্রয়োজন। এ অবস্থায় আদালত দুুপুর ১২টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করে। ১২টা ২ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের ১০ (১) ধারায় আপিল আবেদনটি করা হয়েছে। আমি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আবেদন করছি। আপিল গৃহীত হলে জামিনের আবেদন দেওয়া হবে। ৪০৯/১০৯ ধারায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে বিচারিক আদালত। এ সময় আদালত জানতে চায়, আপিল আবেদনে কি জামিনের বিষয় আছে নাকি শুধুই আপিল গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। আর কী আবেদন আছে? এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটা আপিল অ্যাডমিশনের আবেদনে সাধারণত যা থাকে আমরা তাই চেয়েছি। আমরা জামিনের আবেদন আলাদাভাবেও দাখিল করেছি। এ ছাড়া আপিল গ্রহণের আবেদনেও জামিনের আবেদন আছে। উল্লেখ্য, ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিনের আবেদনে ৩১টি গ্রাউন্ড উল্লেখ করা হয়েছে।

এ পর্যায়ে আদালত মামলার কাগজপত্র দেখে বলে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সাজা বা দণ্ড স্থগিতের বিধান আছে। কনভিকশন কি স্থগিত করা যায়? ক্রিমিনাল অ্যাক্ট ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে কনভিকশন স্থগিতের বিধান নেই। আপনারা তো কনভিকশনও স্থগিত চেয়েছেন। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা গতানুগতিক বিষয়, আমরা ঠিক করে দেব। সাধারণত এটা একটা প্রথা। সেজন্য এটা আমরা চেয়েছি। এ সময় তিনি আবেদনের অংশ থেকে কনভিকশন স্থগিতের বিষয়টি বাদ দেন। এরপর আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদেশ দেয়। আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মামলার নথি তলব করা। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৫ দিন ধরে খালেদা জিয়া কাস্টডিতে আছেন। যেহেতু তাকে শর্ট সেনটেন্স দেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা তার জামিন চাইছি। বয়স, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় তিনি জামিন পাওয়ার দাবিদার। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আদালত ইতিমধ্যে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। সকালে আমরা জামিনের আবেদন পেয়েছি। রেকর্ড আসার পরই বিষয়টি কার্যতালিকায় এনে শুনানি করা হোক। এ সময় আদালত বলে, আবেদনকারীর সাজা তো কম। সাজা কম হলে জামিন দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের প্রথা আছে। এ মামলায় মেরিট আছে। তাই এটা আমরা কার্যতালিকায় এনে শুনানি করতে চাই। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আমরা আপিল অ্যাডমিশনের শুনানি করতে পারিনি। দুদক আইনের ৩৩ (৫) ধারা দেখিয়ে বলেন, এ ধরনের বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রে দুদককে যুক্তিসংগত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আর আমরা আজ ৯টা ৩১ মিনিটে জামিন আবেদনের কপি পেয়েছি। জবাবে আদালত বলে, তারা তো অন মেরিট জামিন চাচ্ছে না। পুরো রেকর্ডের কি দরকার আছে? দুদকের আইনজীবী জবাব দেন, ফৌজদারি আইনে নারী বলে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু দুদক আইনে সে সুযোগ নেই। জামিনের আবেদন অনেক বড়, এর গ্রাউন্ডও অনেক। এ সময় আদালত বলে, সে কারণেই তো আপনি টকশোয় আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন। দুদকের আইনজীবী এ পর্যায়ে বিষয়টি কার্যতালিকায় এনে শুনানি করার সপক্ষে মত দেন। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সাধারণত কম সাজা হলে আপিল আবেদনের পর জামিন দেওয়া হয়। আদালত বলে, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অনেক আদেশ আছে, কম সাজা হলে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব আদেশ ও সিদ্ধান্ত বিশেষ আইন প্রণয়নের আগে। যেহেতু দুদক আইনে আছে দুদককে যুক্তিসংগত সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাই রবিবার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য রাখা হলো। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এ মামলার শুনানি শেষ হয়।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। আইনজীবীরা জানান, ওইদিন এ আবেদনের ওপরে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় দুদক এ মামলা করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর