শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রধান চ্যালেঞ্জ খালেদা জিয়ার কারামুক্তি

মাহমুদ আজহার

প্রধান চ্যালেঞ্জ খালেদা জিয়ার কারামুক্তি

লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.)

বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তিই এখন দলের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.)। তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই তার নেতৃত্বে আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। সেই চ্যালেঞ্জই এখন আমরা মোকাবিলা করছি। তবে আশা রাখি, আগামী রবিবার জামিন পেয়ে যাব। আমরা উচ্চ আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। তবে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি বসে থাকবে না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করা হবে।’ গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। আলাপকালে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ছাড়াও চলমান রাজনীতি এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচন ও বিএনপির অবস্থান নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দল এখন তার মুক্তির দাবিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেই মোতাবেকই দল পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনিও লন্ডন থেকে সলাপরামর্শ দিচ্ছেন। স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র-জুনিয়র সবার মত নিয়েই বিএনপি এখন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আর তৃণমূলেও নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এর আগে নেতাদের মধ্যে কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও এখন আর তা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এদেশে বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তবে কারাগারে যাওয়ার পর বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। এটা আমাদের ভোটের রাজনীতিতেও প্রভাব পড়বে। কারণ, সরকার একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে বিএনপি প্রধানকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটা দেশবাসী ভালোভাবে নেননি। বিশেষ করে নারী ও তরুণ সমাজ এটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ, যেখানে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে, পাচার হচ্ছে তার কোনো বিচার এ সরকার করছে না। অথচ একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে যা তছরুপ না হওয়া সত্ত্বেও সরকার বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তার মতে, ‘বিএনপির এখন জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। আর বিএনপির মতো দল যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে। প্রতিটি আসনে প্রার্থীও একাধিক রয়েছে। সুতরাং নির্বাচন যখনই হোক তাতে বিএনপির কোনো সমস্যা হবে না। এখন সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনে অযোগ্য করার একটি ষড়যন্ত্র করছে। এটাও তারা করতে পারবে না। কারণ, ন্যায় বিচারের মাধ্যমেই বেগম জিয়া মুক্ত হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেলে বিএনপির বিজয় ঠেকানো যাবে না। আগামীতে বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই সরকার গঠন করে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’ সেনাবাহিনীর সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ দুঃখজনক হলো দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। বিএনপিকে বাইরে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। বিএনপি প্রধানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে সরকার প্রধানসহ তাদের দলের নেতা-কর্মীরা ভোটের প্রচারণা করছেন। এটা কি সুষ্ঠু নির্বাচনের আলামত? আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি টাকা খরচ করে যারা ভোট প্রার্থনা করছেন তাদের কিছুই বলছেন না তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপির নেতা-নেত্রী-কর্মীদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে—এটা নিয়ে কমিশন মুখে কুলুপ এঁটেছে। এমন লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা চাই ইসি স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। সব দলকে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।’

সর্বশেষ খবর